জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অবদান ৮০ শতাংশ। তার মধ্যে শিল্পের অংশগ্রহণ ৩৭ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে মোট জনসংখ্যার ৫ বছরের বেশি বয়সের কর্মজীবীর মধ্যে শিল্প উৎপাদন খাতে সংশ্লিষ্ট রয়েছে ১৮.৪০ শতাংশ। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নানা কারণে জর্জরিত এখন শিল্প খাত।
২০২১-২২ অর্থবছরে ১৪.৫৫ প্রবৃদ্ধি থাকলেও সেটি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ১২.৭৯%। ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় মূল্যে অস্থিরতা, শুল্ক নীতিতে পরিবর্তন যেন বিকাশ ছাড়িয়ে টিকে থাকাকে চ্যালেঞ্জ করছে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, নতুন সরকারের বাণিজ্যনীতির দিকে শিল্পমালিকরা তাকিয়ে ছিলেন।
টাওয়েল টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শাহদাত হোসেন সোহেল বলেন, 'গ্যাসের দাম ১০ টাকা ছিলো। ১৮ জানুয়ারি ঘুম থেকে উঠেই হয়ে গেলো ৩০ টাকা। এই যে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে আমরা এখন গ্যাস পাচ্ছি না। ফ্যাক্টরি চলছে না, প্রায় ৩০ শতাংশ সামর্থ্য অনুযায়ী চলছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।'
বিটিটিএলএমইএ'র চেয়ারম্যান হোসাইন মাহমুদ বলেন, 'ঋণ নেয়া এবং ঋণ না নেয়া কোন প্রতিষ্ঠানই ব্যবসা করতে পারবে না। আমার মনে হয় এসব বাধাগুলোকে উঠিয়ে দেয়া উচিত। কারণ একটা ঋণ নেয়া প্রতিষ্ঠান যদি দেশের বাইরে রপ্তানি করে ডলার নিয়ে আসতে পারে তাহলে সেটাকে সুযোগ দেয়া উচিত। যাতে আমরা ডলারটাকে ধরে রাখতে পারি।'
দেশের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার আরেকটি খাত বিদেশি বিনিয়োগ। তবে বৈশ্বিক মন্দা সেখানেও ছাপ রেখেছে। কোভিডের পর এই খাতেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী দেখা গেলেও সেটি বছরের শেষে অনেকটা স্তিমিত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি সাপেক্ষে বেসরকারি বিনিয়োগ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২৩.৬৪ শতাংশ। তাই বিদেশি বিনিয়োগ ফেরাতেও সরকার কূটনীতিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সাথে বৈঠক করছে।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, 'অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিসিকসহ বিভিন্ন জায়গায় আমরা কাজ করছি। শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নয়, আমাদের দেশেও বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ৫০ বছরে অনেক উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। আমরাও তাদেরকে সে পর্যায়ে গণনা করছি। সুতরাং তারাও বিনিয়োগ করতে পারে। সেইসঙ্গে আমরা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পটাকেও ঠিক রাখছি।'
এদিকে দেশীয় শিল্পের চাকা গতিশীল রাখতে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ সব শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা চলছে। তবে যারা শিল্পমালিক নন, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানের কথা জানান শিল্পমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, 'ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সৎ থাকে। কিন্তু এখানে যারা অন্যপন্থার চেষ্টা করে এবং নানাভাবে ফায়দা নিতে চায় তাদের আমরা একটু চিন্তা-ভাবনা করছি যাতে ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট না হয়। ব্যবসা করবে মুনাফা হবে সেটা স্বাভাবিক। দেশটাকে ৫০ বছরে ব্যবসায়ীরাই নিয়ে আসছে এই অবস্থানে। শুধু সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, একটা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী ব্যবসাবান্ধব।'
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত না করে শিল্প বিকাশের সব সিদ্ধান্ত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করবে বলেও জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।