চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯০ শতাংশ পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ১২ কোটি মেট্রিকটন পণ্য আসে খোলা বা কার্গো জাহাজে।
যদিও বন্দর চ্যানেলের নাব্যতা কম থাকায় বড় জাহাজে আসা শিল্প কারখানার কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্য খালাস হয় বহির্নোঙরে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে। সার, গম, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, পাথর, স্টিল, এইচ আর কয়েল এসব পণ্যের সিংহভাগই খালাসের পরে নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়।
সম্প্রতি দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহনে তৈরি হয় সংকট। বিঘ্নিত হয় কনটেইনার জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও ডেলিভারি।
যদিও এই সময় বহির্নোঙরে থাকা বড় কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ছিল অনেকটাই স্বাভাবিক। চার দিনে প্রায় ৪ লাখ মেট্রিকটন পণ্য খালাস হয় এবং নৌপথে পরিবহন করা হয় দেড় থেকে দুই লাখ মেট্রিকটন।
অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহন স্বাভাবিক থাকায় দেশের সাপ্লাই চেইন বিশেষ করে জ্বালানি তেল, খাদ্যশস্য, কয়লা এবং ভারী শিল্পের কাঁচামাল পরিবহনে সংকট হয়নি বলে মনে করেন নৌবাণিজ্য অধিদপ্তর।
নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘নৌ পথে চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয় অন্যান্য পথে পরিবহনের চেয়ে।’
জাহাজ মালিকরা বলছেন, নৌপথে পণ্য পরিবহন সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। সড়কপথে যেখান প্রতি মেট্রিকটন পণ্য পরিবহনে এক থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয় সেখানে নৌপথে হয় ৫০০ টাকা।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ বলেন, ‘সরকার যদি নৌপথের দিকে নহর দেয় তাহলে জনগণের কাছে খুব কম খরচে পণ্য পৌঁছে যাবে।’
লাইটারেজ জাহাজ মালিকরা বলছেন, বেশ কিছু নৌ রুট ড্রেজিং করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল বরিশালের কালিগঞ্জে নাব্যতা কমে গেছে।
এছাড়াও নাব্যতা কমে গেছে ঘোড়াশাল, বাঘাবাড়ি-নগরবাড়ি নৌ রুট, যশোরের নোয়াপাড়া চ্যানেলের। সেই সঙ্গে সন্দীপ চ্যানেলে বেশ কিছু জাহাজ ডুবে গেলেও সেগুলো উদ্ধার না করায় প্রায়ই দুঘর্টনার কবলে পড়েছে লাইটারেজ জাহাজ।
এতে ক্ষতি হচ্ছে জান ও মাল । নিরাপদ ও সাশ্রয়ে পণ্য পরিবহনে নিয়মিত ড্রেজিং ও ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
লাইটারেজ জাহাজ মালিক ও কমিশন এজেন্ট শেখ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘোড়াশাল, বাঘাবাড়ি-নগরবাড়ি নৌ রুট, যশোরের নোয়াপাড়া চ্যানেলের সবগুলোর এখন ড্রেজিং দরকার। ১০০ শতাংশ নিখুঁত ড্রেজিং করতে হবে।’
মহাসড়কে টোল ও ওজনের সীমাবদ্ধতায় বেড়ে যায় খরচ। এক্ষেত্রে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিপণনে বিলুপ্ত হওয়া ছোট ছোট নৌ রুট সচলের দাবি শিল্প মালিকদের।
অ্যাগ্রো হিফস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোয়েব হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রোডাক্ট কস্ট কম যদি নদীগুলোর দিকে নজর দেয়া যায়। তাহলে আবার চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে দাঁড়াবে।’
গেল বছর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামালসহ প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মেট্রিকটন পণ্য খালাস হয়। এসব পণ্য খালাস করে প্রায় দেড় হাজার লাইটারেজ জাহাজ।