আন্তঃদেশিয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথের নির্মাণ কাজ। নানা সংকটে দেড় বছরের জায়গায় প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় লাগে ৫ বছরেরও বেশি। ১২.২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ রেলপথ গিয়েছে আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলার নিশ্চিন্তপুরে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশের ৬.৭৮ কিলোমিটারে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪১ কোটি টাকা।
কয়েক দফা ট্রায়াল শেষে গেল বছরের পহেলা নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেলপথের উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। তবে তার আগে ৩১ অক্টোবর আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেলপথ দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির অনুমতি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
এরপর ভারত থেকে পাথর, গম ও গমের ভূষিসহ নানা পণ্য রেলপথে আমদানির প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। তবে নিশ্চিন্তপুর থেকে আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ তৈরির কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা বলেন, 'আমরা খুব আশাবাদী এই রেলপথ নিয়ে। নিশ্চই রাজস্ব বাড়বে। আমাদেরও ভাগ্য বদলাবে বলে বিশ্বাস।'
আরেকজন জানান, 'আমাদের কাছে তো বড় বড় পার্টিরা আসছিল। কিন্তু রেলের কাজ শেষ না হওয়াতে আমরা নিশ্চিত করতে পারি নাই আমরা মালামাল এনে দিতে পারবো।'
আগামী জুন-জুলাই এর পর সরকার ট্যাক্স আরোপ করার পর থেকে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট করা যাবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, রেললাইন প্রস্তুত থাকলেও গঙ্গাসাগর স্টেশনের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন ভবনের কাজও শেষ হয়নি। এছাড়া বিল পরিশোধ নিয়ে জটিলতায় গত বছরের ৩০ নভেম্বর থেকে এবছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এতে বিলম্বিত হয় প্ল্যাটফর্ম নির্মাণের কাজও।
টেক্সমেকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলী মো. রিপন শেখ বলেন, 'রেল চলাচলের জন্য সম্পূর্ণভাবে রেলওয়ে ট্র্যাক প্রস্তুত। আমরা অলরেডি উদ্বোধন করেছি, ট্রায়াল সম্পূর্ণ করেছি। সামনে আরো ট্রায়াল দিবো এই রকম। শুধু প্ল্যাটফর্মের কাজ বাকি আছে। আর এপ্রোচ রোডের কাজ বাকি আছে। এটা এক দেড় মাসের মধ্যে কমপ্লিট করে ফেলবো।'
এমন অবস্থায় আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু কথা জানান রাজস্ব কর্মকর্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার বলেন, 'ট্রেন চলাচল উভয় দেশের সম্মতিক্রমে হবে। সম্পূর্ণ রেডি হওয়ার পরেই কাজ শুরু হবে এবং শুল্ক হার আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড যেভাবে নির্ধারণ করে দিয়েছে সেইভাবেই হবে।
অবকাঠামোগত অবশিষ্ট কাজ শেষ করে দুই মাসের মধ্যে বাণিজ্য শুরু করা যাবে বলে আশা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের। বলেন, 'বাংলাদেশ অংশ যেটা আছে সেই অংশের কাজ শেষ হয়ে গেছে এবং এখানে যে অথরিটি কাজ করেছে, তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা ছিল তা সমাধান হয়ে গেছে। আশা করা যায় দুই মাসের মধ্যে চালু হবে।'
প্রথমে পণ্য পরিবহন হলেও পর্যায়ক্রমে আখাউড়া-আগরতলা রুটে যাবে যাত্রীবাহী ট্রেনও।