আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

'রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী নয়'

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। গেল কয়েক মাস ধরে এ খাতে রপ্তানি কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তা প্রতীয়মান, ইতিবাচক ধারায় ফেরেনি পোশাক রপ্তানি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ৭২ শতাংশ বাড়লেও বিজিএমইএর তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ সময়ে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪০৪ কোটি ডলার, যা গেল অর্থবছরের একইসময় ছিল ৪২৮ কোটি ডলার।

ডলার ও নানামুখী সংকটের এ সময়ে পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর কথা বলা হলেও রপ্তানিতে ভাটা। এমন সময় রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনা উঠিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তৈরি পোশাক, কৃষি, চামড়াসহ ৪৩ ধরনের পণ্যের রপ্তা‌নি‌তে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। প্রথম ধাপে খাতভেদে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমবে। ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যেহেতু শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ও ভর্তুকি উঠে যাবে তাই আগে থেকেই এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সাবসিডি ছাড়া কী কোন দেশ চলতে পারবে না। যেভাবে আমরা ওপেনলি সাবসিডি দিচ্ছি, এটি আর সামনে রাখা যাবে না। সরকার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তটি নিয়েছে।’

তবে এ সিদ্ধান্ত সময়পযোগী নয় বলে মনে করেন রপ্তানিকারকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এমন সব সিদ্ধান্তে রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এখন থেকে শুরু করা যৌক্তিক, এটি ঠিক আছে। কিন্তু শুরু করে কী ব্যাকডেটে কার্যকর হবে, সেটা তো যৌক্তিক হতে পারে না। আর সেটা নিশ্চয়ই অর্থনীতিবিদরাও যৌক্তিক বলবে না।’

প্রজ্ঞাপনে রপ্তানিমুখী দেশীয় বস্ত্র খাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাকের পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে রপ্তানি সহায়তা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১ শতাংশ। নতুন বাজারে ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। এছাড়া তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ নগদ সহায়তা ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। তবে প্রজ্ঞাপনে পোশাকের পাঁচটি পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা পুরোপুরি উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। অথচ পোশাকশিল্পের শীর্ষ এ রপ্তানি পণ্য থেকেই গেল অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৬ শতাংশের বেশি। এছাড়া নতুন বাজার থেকে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া বাদ দেয়ায় হুমকির মুখে পড়বে রপ্তানি।

বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘এখন হঠাৎ করে উঠিয়ে দেয়া হলে শিল্পকে উৎসাহিত করা হবে না। এতে করে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, ডলার সংকট আরও বাড়বে।’

মাঝপথে এমন সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকরা কিছুটা ধাক্কা খেলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে তা পুষিয়ে যাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের গেল আগস্টে রপ্তানি প্রণোদনার প্রজ্ঞাপন জারি করার ৬ মাসের মাথায় তা বন্ধ করলো সরকার। যা ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হয়েছে।

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, লোহিত সাগরের অস্থিরতা আর জ্বালানি সংকট তো আছেই। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরে যে কয়েকটি কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিম্নগতি, সে তালিকায় নতুন নাম রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত। এতে রপ্তানি আরও কমার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।