তথ্য-প্রযুক্তি , আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

সম্ভাবনা থাকলেও সমস্যায় পিছিয়ে লেন্স শিল্প

২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের লেন্সের চাহিদা ছিলো ১৮ বিলিয়ন ডলারের। যা ২০৩০ সালে দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়নে।

চট্টগ্রাম ইপিজেডে জাপানি মালিকানাধীন লেন্স কারখানা স্যানকো। সেখানে ঢুকলেই চোখে পড়ে সারি সারি যন্ত্রপাতি। ঘূর্ণমান গোল চাকতির মত সয়ংক্রিয় এক জিনিসের উপর মিশ্রিত হয় সাদা রঙের তরল। ছোট্ট লেন্স তৈরিতে এ যেন মহাকর্মযজ্ঞ।

মূলত এই চাকতির ভেতরেই রয়েছে লেন্স। নানান ধাপ পেরিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সব লেন্স। যা রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের নানান দেশে। ক্যামেরা, মোবাইল, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, ভার্চ্যুয়াল প্রযুক্তিসহ বিশ্বে ৭ টি প্রধান খাতে যার চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিশ্বে ২০২৩ সালে এই বাজার ছিলো ১৮ বিলিয়ন ডলার। গবেষণা বলছে  ২০৩০ সালে লেন্সের চাহিদা হবে ৩০ বিলিয়ন ডলারের।

আমাদের প্রত্যহিক জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত লেন্স ব্যবহার করি। এ বস্তুটির ব্যবহার এতটাই বেশি যে ভাবলে অবাক হতে হয়। মোবাইলের ক্যামেরা, সিসিটিভি, ডিজিটাল ক্যামেরা, ফটোকপি মেশিন থেকে শুরু করে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাবহার হচ্ছে এই লেন্স। ছোট থেকে বড় নানান ধরনের লেন্স ব্যবহার হয় নানান কাজে। এসব নিয়ে একটু ভাবলেই লেন্স সম্পর্কে আগ্রহ জন্মানো স্বাভাবিক।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশে স্যানকো কারখানা লেন্স তৈরির যাত্রা শুরু করে। ছোট-বড় কিংবা পণ্যের ধরণ অনুযায়ী নানারকম লেন্স তৈরি হয় এখানে।

যেমন স্ক্যানার মেশিনের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ইপসন। এই জনপ্রিয় ব্র্যান্ডটির লেন্স তৈরি হয় চট্টগ্রামের এই কারখানায়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, হংকং, চীনে ব্যবহৃত হচ্ছে এখানকার উৎপাদিত লেন্স। বছরে ১০ লাখ লেন্স রপ্তানি করলেও সক্ষমতা আছে ১৫ লাখ লেন্স উৎপাদনের।

স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজার বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, 'নতুন অনেক প্রযুক্তির সাথে ল্যান্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে আমরা মেশিন আমদানি করছি। অটোমেশিনের কিছু ডিভাইস লেন্স আমরা এখানে তৈরি করছি।'

লেন্স রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯ মিলিয়ন ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩২ মিলিয়ন ডলার এবং সবশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার।

চট্টগ্রাম ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আব্দুস সোবাহান বলেন, 'এটা বাংলাদেশের জন্য নতুন একটা শাখা। এই সেক্টরের শ্রমিকদের দক্ষতা অনেক ভালো।'

এ খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কাঁচামাল। কারণ শতভাগ আমদানি নির্ভর। বর্তমানে প্রতিযোগিতা করে দশমিক ৫ ডলার থেকে শুরু করে ২ ডলার মূল্যে প্রতিটি লেন্স রপ্তানি করছে স্যানকো।

স্যানকো অপটিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রোডাকশন অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, 'কাঁচামাল বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের আনতে হয়। এটা আমাদের একটা বাধা। আবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে বিদেশিরা এদেশে আসতে অস্বস্তিবোধ করে।'

সানকো ছাড়াও চট্টগ্রাম ইপিজেডের জাপানি প্রতিষ্ঠান সিবিসি অপট্রনিকস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ঢাকা ইপিজেডে অবস্থিত তাইওয়ানি প্রতিষ্ঠান ইয়াং অপটিকস বাংলাদেশ লিমিটেড রপ্তানিমুখী এই পণ্যটি উৎপাদন করছে।

লেন্সের ব্যবহার সম্পর্কে জানলে মনে হয় আমরা লেন্সের সমুদ্রে বাস করছি। দিনকে দিন এই লেন্সের ব্যবহার বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে এই খাতে এখনও খুব বেশি বিনিয়োগ নেই। তবে এখানকার সস্তা শ্রম আর দক্ষ জনবলকে পুজিঁ করে সহজেই এ খাতের প্রসারের সুযোগ রয়েছে। সেটি হলে আরও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও।