সুদের হারের নয় ছয় উঠে গেছে, তাতে স্বস্তি ফিরলেও গত দু'বছরে কমেছে আমানতকারীর সংখ্যা। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমানতের সুদের হারের বাঁধাধরা নিয়ম পাল্টেছে। ঋণের সুদের হার ৯ থেকে এখন ১৪ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির মতোই ১০ থেকে ১২ শতাংশে সমান তালে আছে সুদের হার। এছাড়া বছরের বিভিন্ন ফি আর চার্জে সুবিধা কমে আরও কয়েক শতাংশ। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, আমানতকারীদের ফেরাতে হলেও ব্যাংকের তারল্য ধরে রাখতে মূল্যস্ফীতির সাথে আমানতের সুদের হারের সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই।
এছাড়া আসছে বছর ৫.৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ও জিডিপিতে অংশে মোট বিনিয়োগ থাকতে হবে ৪১ শতাংশ। ব্যাংক বিমুখ আমানতকারীদের ফেরাতে না পারলে এই অর্থ বিনিয়োগ অনেকটাই কঠিন হবে ব্যাংকগুলোর জন্য। পাশাপাশি সরকারের বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের ওপর চাপ কমানোর পরামর্শ তাদের।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলে, 'কন্ট্রোল উঠিয়ে নেয়ার পরও ডেপোজিটরদের রেট ৯ থেকে ১০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাড়ে ১০ শতাংশ। এখানে ডিপোজিটের আসল রিটার্ন নেগেটিভ। ৯ শতাংশ গ্রোথ রেট করতে গেলে যদি আয়কর ধরা হয় ৪.৫ শতাংশ, যেটা এই বছর ভারত তাদের ১০ শতাংশ গ্রোথ রেট ধরার জন্য করেছে। তাহলে আমাদের সর্বমোট ইনভেস্টমেন্ট রেট লাগে ৪১ শতাংশ। যদি কোনো কারণে ৪.৫ শতাংশ না করে আরও বেশির দিকে যেতে হয়, তাহলে তো ইনভেস্টমেন্ট রেট ৪৫ এর কাছাকাছি যাবে।'
রেপিড চেয়ারম্যান ড. এম. রাজ্জাক বলেন, 'পৃথিবীতে খুব কম দেশই আছে যারা এক বছরের মধ্যে জিডিপি ৪ শতাংশ বড় করতে পেরেছে। এটা করা খুবই ডিফিকাল্ট, এটা হয়নি। আমরা বাংলাদেশে অনেকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু এটা হয়নি। গতবছরের বাজেটেও এটা বলা ছিল প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট ২৩ ভাগ থেকে বেড়ে ২৭ ভাগ হবে। এটা আমাদের ক্ষেত্রে বুঝতে কষ্ট হয় যে যেটা আমরা আগে করতে পারিনি এবং এবছরও এটা করা প্রাঙ ইম্পসিবল। কারণ এবছর সুদের হার আরও অনেক বেড়েছে।'
এবার উৎপাদন সহায়ক শিল্প প্রতিষ্ঠান এগিয়ে নিতে বাজেটে সরকারের খাত ভিত্তিক পরিকল্পনা ছিলে উল্লেখযোগ্য। অর্থ ও নীতি বিশ্লেষক সংস্থা রেপিডের আলোচনায় বক্তারা বলেন, আমদানি রপ্তানি বৈষম্য না মেটালে এর প্রভাব পড়বে রিজার্ভে। এছাড়া আসছে বাজেটে রপ্তানি খাতের সরবরাহ জ্বালানি ব্যয় কমানো সহায়ক হবে বলে মনে করেন শিল্পমালিকরা।
বিজিএমইএ পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, 'আমার গ্যাস বিল আসতো ২ কোটি টাকা, একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি সেটা ৪ কোটি টাকা হয়ে গেছে। ২ কোটি টাকা যে বেশি পে করছি, যা এক বছরে ২৪ কোটি টাকা। আমরা কি এই পরিমাণ টাকার প্রফিট করি? ৯ শতাংশ যখন ইন্টারেস্ট রেট ছিল সেটার ইন্টারেস্ট রেট ছিল অনেক বেশি। আর এখন সেটা হয়েছে ১৪ শতাংশ। সামনের ৬ মাসে কী হবে তা আমি এখন থেকেই বুঝতে পারছি।'
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান আমদানি-রপ্তানি খাতে বৈষম্য কমানো উৎপাদন খাতে ইতিবাচক হবে বলে স্বীকার করেন। তবে সংকটময় অবস্থা সামাল দিতে সরকারের ব্যয় বরাদ্দের সুস্পষ্টকরণের ওপরও জোর দেন।
মসিউর রহমান বলেন, 'যেসকল ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ের বিভিন্ন অংশকে আলাদা করা যায়, সে জায়গায় মূসকের অংশটা কম। জমি কেনা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যে শুল্ক দিতে হয় এগুলো সেভাবে আলাদা করা সম্ভব নয়। কিন্তু ম্যানিফ্যাকচারিংয়ের জন্য যেসব খরচ হয় সেগুলো বের করা সম্ভব।'
এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামোগত সুবিধার পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটানো প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। পাশাপাশি নীতিসহায়তা দিতে হবে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকে।