নির্মাণাধীন ভবন, শহরের রাস্তা, কৃষিজমি কিংবা শিল্প কারখানা; সবখানেই চোখে পড়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কর্মব্যস্ততা। বিদেশের মাটিতে হাড়ভাঙা খাটুনিতে এভাবেই সময় কাটে শ্রমজীবীদের।
নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বুকভরা স্বপ্ন কেবল পরিবারের মুখে একটুখানি হাসি ফোটানোর জন্য।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এমন বৈধ প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন প্রায় নয় লাখ। এ তালিকায় অনিয়মিতদের যোগ করলে মোট প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা নয় লাখেরও অনেক বেশি হবে বলে মনে করেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয় একেকজন প্রবাসীর জীবন-সংগ্রাম। শ্রমজীবী এসব মানুষদের অধিকার আদায়ের দিনটি ছুটির দিন হলেও; এদিন সবার মুখে হাসি ফোটে না। কারণ একদিন কাজ না করলে মজুরি মেলেনা অনেকেরই।
প্রবাসীদের একজন বলেন, ‘আমাদের মতো যারা প্রবাসী আছে তাদের জন্য এই ছুটি ভালো বিষয় না। কারণ আমরা কাজ না করলে টাকা পায় না। একদিন কাজ বন্ধ তো আমাদের একদিনের টাকা বন্ধ।’
আরেকজন বলেন, ‘যারা শপিংমল ও রেস্টুরেন্টে কাজ করে তারা ইচ্ছা থাকলেও ছুটি নিতে পারে না।’
এমন কঠোর বাস্তবতাতেও প্রবাসমুখী হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সফলতার প্রত্যাশায় বিদেশে পাড়ি জমিয়ে জীবন প্রদীপ নিভেছে কারো কারো। ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় স্বাভাবিক ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ১৯৯ প্রবাসীর। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রাণ গেছে আরো ২৬২ প্রবাসীর।
এদিকে অনিয়মিত হওয়ায় আটক আতঙ্কে সময় কাটছে অনেকের। তাই প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক তৎপরতাসহ নানা দাবি বৈধতার সুযোগ প্রত্যাশী প্রবাসীদের।
মালয়েশিয়ার বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের টেকনিক্যাল ম্যানেজার মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘প্রবাসীরা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। প্রবাসীদের জন্য ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈধ পথে যদি প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠায় তার জন্য সরকারকে একটি ইন্স্যুরেন্স পলিসির ব্যবস্থা করতে হবে।’
প্রবাসীরা কেবল বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান না-তারা দেশের সম্মান, শ্রম আর আত্মত্যাগেরও প্রতীক। শ্রমিক দিবসে তাই তাদের প্রত্যাশা; ঘাম ঝরানোর দাম যেন শুধু মুদ্রায় নয়, যেন হয় সম্মানের, অধিকারের।