বিশেষ প্রতিবেদন
অর্থনীতি
0

আমদানি ব্যয় ও দায় পরিশোধের চাপে ফের অস্থিতিশীল ডলারের বাজার

আমদানি ব্যয় ও দায় পরিশোধের চাপে ফের অস্থিতিশীল ডলারের বাজার। প্রতি ডলার লেনদেন হচ্ছে ১২৭ টাকা পর্যন্ত। আর ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত দামের বাইরে গিয়ে কিনতে হচ্ছে ডলার। তাই এবার আইএমএফ'র পরামর্শে নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেখানে আংশিক বাজারনির্ভর বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে। তবে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পুরোপুরি বাজারের উপর দাম ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ বিশ্লেষকদের।

আওয়ামী লীগের আমলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নে যে বিনিয়োগ হয়েছে তার ৪০ শতাংশের বেশি লুটপাট আর পাচার হয়েছে। যার পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। এই অর্থ পাচারে চাপ পড়েছে রিজার্ভের। আর সংকট দেখা দেয় ডলারের। ফলে বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে কমতে থাকে টাকার মান।সময়ের সাথে সাথে সেই দাম সমন্বয় না করায় সংকট আরো বাড়ে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার সময় প্রতি ডলারের দাম ছিল ৬৭ টাকা। এই দর বেড়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৬৯ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। ২০১২ সাল থেকে ডলারের দাম এক লাফে ৭৬ টাকায় পৌঁছায়। ২০১৪ সালে হাসিনা সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে ডলার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। ব্যাংক থেকে নানা জালিয়াতি করে অবাধে ডলার পাচার শুরু হয়। সরকার বিদেশি ঋণ এনে এই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করে।

পরে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয় কয়েক দফা। এতে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হলে বাড়তে থাকে ডলারের সংকট। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮০ টাকা, যা ২০২০ সালে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা ও ২০২১ সালে হয় ৮৫ টাকা। এর পর ২০২২ সালে একলাফে প্রতি ডলারের দর পৌঁছায় ১০০ টাকায়।

তবে এরপরও থাকে ডলারের চরম সংকট। ২০২৩ সালে খোলাবাজারে ডলার দর ১৩০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচন নীতির কারণে ডলারের দর কিছুটা কমে আসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করলে প্রতি ডলারের দর ১২০ টাকায় ওঠানামা করে। এই পদ্ধতিতে ডলারের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে গত কয়েক মাস ডলার বাজার স্থিতিশীল থাকলেও আমদানি ও দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় ফের বাড়ছে ডলারের দাম। ফলে খোলা বাজারে এর দর হয়েছে ১২৭ টাকা পর্যন্ত। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দর। তাই ব্যাংকগুলোকে বাজারের সাথে তাল মিলিয়ে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে ডলার। এসময় ব্যাংকগুলোকে ১২৫ থেকে ১২৬ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে ডলার কিনতে দেখা গেছে।

তাই আইএমএফের পরামর্শে এবার নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ডলার সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করে সংস্থাটি।

চাহিদার চাপে দাম বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত মূল্য থেকে অতিরিক্ত দামে ডলার কিনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। তাই অবস্থায় আংশিক বাজার ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ধারণা করা হচ্ছে এতে তাড়াতাড়িই ডলারের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন ডলারের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত এর দাম সহনীয় না করা গেলে ভোগান্তি পোহাতে হবে সাধারণ মানুষকে।

নতুন এ পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বাজারের দাম সংগ্রহ করে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর সমন্বয় করা অনেকটা স্মার্ট সুদ হার নির্ধারণের পদ্ধতি অনুসারে। ফলে দ্রুত সংকট কমে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘আপার আর লোয়ার লিমিট আমরা সেট করে দিয়েছিলাম। হয়ত এর মধ্যে ব্যাংকগুলো ঠিক থাকতে পারছে না। চাহিদা কি কি কারণে বেড়েছে সেগুলো আমরা দেখছি। আইএমএফের পরামর্শে এবার নতুন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হবে।’

অপরদিকে আংশিক নয়, পুরোপুরি বাজারের উপর দাম ছেড়ে না দিলে সংকট কাটবে না বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।

অর্থনীতিবিদ ড. শাহিদুল জাহিদ বলেন, ‘ডলারের চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা জোগানটা নিশ্চিত না করতে পারি তাহলে ডলার দাম বেড়েই যাবে। ডলারের দাম চাপিয়ে রেখে এইটা ঠেকানো সম্ভব না। ডলারের দাম ঠিক রাখতে হলে তা বাজারের উপরেই ছেড়ে দেয়া উচিত।’

ডলারের দাম সহনীয় করা না গেলে সুদ হার বৃদ্ধির সুফল মূল্যস্ফীতিতে দেখা যাবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

ইএ