৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের সম্মেলন রুমে যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন কিছুক্ষণ পরপরই করতালিতে মুখর হয়ে উঠছিল হলরুম।
ভাষণে একদিকে ছিল জাতীয় রাজনীতি অবক্ষয়ের কথা, ছিল অর্থনীতির দুরাবস্থার চিত্রও। তার কথায় উঠে এসেছে ছাত্র-জনতার বীরত্বগাঁথা গণ-অভ্যুত্থানের কথা, নিঃসংকোচে তুলে ধরেছেন কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের চিত্রও। বিশ্বমঞ্চে দেয়া ৩৬ মিনিটের কথামালায় ড. ইউনূস দৃঢ় কণ্ঠে ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদের পাশাপাশি বন্ধ চেয়েছেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধও। বলেছেন পরিবেশ, রোহিঙ্গাসহ সামাজিক ব্যবসার কথাও। সব মিলিয়ে ড. ইউনূসের ভাষণে জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক কিছুই বাদ যায় নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিনিয়র সাংবাদিক মনির হায়দার বলেন, 'গত জুলাই-আগস্টে যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে, তার একটা চিত্র এখানে তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) উপস্থাপন করেছেন। কতটা রক্তে এবং জীবন ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন হয়েছে তা তিনি তুলে ধরেছেন।'
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এই ভাষণে তাদের চাওয়া পাওয়ার সব চাহিদা পূরণ হয়েছে। বিশেষ করে এর মধ্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে নতুন করে বাংলাদেশের জন্য পোশাক শিল্পের দ্বার উন্মুক্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, 'বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য যেভাবে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন তা কাজে লাগবে। এবং বিশ্ব নেতাদের কথায় প্রত্যেকে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত আছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।'
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর পরিচালক রাজিব চৌধুরী বলেন, 'বহির্বিশ্বে তার গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে আমাদের যে সমস্যাগুলো আছে বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে যে সমস্যাগুলো আছে তা তুলে ধরবেন বলে মনে করি। আশা করি এগুলোর সমাধান তিনি আমাদের জন্য নিয়ে আসবেন।'
ড. ইউনূসের ভাষণে গুরুত্ব পেয়েছে বিভিন্ন দেশে বসবাস করা দেড় কোটি বাংলাদেশি অভিবাসীদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়টিও। এর মধ্য দিয়ে দেশে দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্মান ও অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হবে বলে মনে করছেন অভিবাসী বিশেষজ্ঞরা।
সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট এর বাংলাদেশ চেয়ারপারসন শেকিল চৌধুরী বলেন, 'প্রায় দেড় কোটি অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছেন। এই অভিবাসী সম্প্রদায়ের একটা সুন্দর জীবন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।'
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সম্মেলনে মাত্র চারদিনের সফরে ড. ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ ৩৫ থেকে ৪০ জন বিশ্ব নেতার সাথে বৈঠক করেছেন যা ইতিহাসে বিরল।