অর্থনীতি
0

গত দুই অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে

দেশে গত দুই অর্থবছরজুড়েই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে গেল অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ১২ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। যদিও সে হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কোনোভাবেই তা সম্ভব হয়নি। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য নেয়া হয়েছে তা সামনে রেখে মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেক্ষেত্রে সুদ হার না বাড়িয়ে টাকা ছাপানো বন্ধসহ আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

দিন এনে দিন চালানো আর সীমিত আয়ের মানুষের জীবনধারণের ব্যয় মেটানো এখন অনেকটাই কঠিন। চাহিদা থাকলেও কমানো হয়েছে খরচ। প্রয়োজন মেটাতে আয়ের মধ্যেই জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা চলে। কারণ মূল্যস্ফীতির সূচক এখন উর্ধ্বমুখী।

গত জুন শেষে দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০.৪২ শতাংশ আর সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯.৭২ শতাংশ। সদ্য বিদায় নেয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই হার ১২ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের তিন মাস যা ১২ শতাংশের বেশি ছিল। এরমধ্যে আগসস্টে সবচেয়ে বেশি ছিলো ১২.৫৪ শতাংশ। পরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ৯ শতাংশের ঘরে নামলেও তা আবারও বেড়ে যায়। আর এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিতে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা হয়। মূলত মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছিল।

মুদ্রানীতিতে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের জুন মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ শতাংশ। সেখানে মে মাস পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এরপরও যখন মূল্যস্ফীতি কমছিল না তখন বাজারে অর্থের পরিমাণ কমাতে ৯-৬ সুদহার থেকে বের হয়ে আসে সরকার। খোলা বাজারে ছেড়ে দেয়া হয় আমানত ও ঋণের সুদ। এতে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সুদহার। তবে তা খুব একটা কাজে আসেনি। তাই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ছোট করে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আর এই লক্ষ্য পূরণে আগামী মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার জন্য এই বছরের বাজেট যেটা সেটা কিন্তু গত বছরের বাজেটের তুলনায় বাড়েনি। 

এদিকে দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে গত অর্থবছরের মধ্যেই ঋণের সুদহার ৯ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫ শতাংশে ঠেকে। আর এরই মধ্যে সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহার উঠেছে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশে। যদিও সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান হয়নি।

তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদহার আরো বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও। তবে শুধু সুদ হার বাড়ানোই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন এই ব্যাংকার।

ব্র্যাক ব্যাংকের ভাইস চেয়ারপারসন ফারুক মঈনউদ্দীন বলেন,  শুধুমাত্র সুদের হার কমিয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে ফাইট করা কঠিন হয়ে পড়বে। সেন্ট্রাল ব্যাংকের যে ফান্ড আছে সেটার সাথে সমন্বয় থাকতে হয় ফিসক্যাল পলিসিরও।  রাজস্ব বিভাগ আবার এই ফিসক্যাল পলিসিকে মনিটরিং করে। সুতরাং এই রাজস্ব বিভাগের সাথে সমন্বয় সাধনের কাজ কিন্তু আমরা করি না।

অপরদিকে মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহার বাড়িয়ে আবার টাকা ছাপানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।

অর্থনীতিবিদ ড. শহিদুল জাহিদ বলেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির কার্যকারিতা তো থাকবেই।  এর পাশাপাশি সরকারের যে অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রয়েছে  ফিসক্যাল পলিসি, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 

এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় কমানোর পরামর্শও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইএ