এখন ভোট
অর্থনীতি
0

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

পরিবারের মতোই দেশের আয় ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে জীবন যাত্রায় স্থিতিশীলতা ফেরানোই হবে নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।

এজন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সামনে রেখে আর্থিকখাতে সংস্কার, জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় গুণগত পদক্ষেপ, ঘরে-বাইরে উৎপাদন গতিশীল ও রেমিট্যান্স ধরে রাখতে বড় উদ্যোগ নিতে হবে সরকারের প্রথম বার্ষিক প্রান্তিকে।

বৈশ্বিক কারণে ঘর থেকে জাতীয়, দেশ থেকে আন্তর্জাতিক, পরীক্ষা দিতে হচ্ছে অর্থনীতিতে উদীয়মান বাংলাদেশকে। সমস্যায় জর্জরিত গেলো বছরকে নতুন করে সাজাতে আসছে নতুন সরকার। তার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। যেখানে গ্রাম আর শহরের মানুষের আয়ের সাথে আছে ব্যয়ের পার্থক্য, আর ভারের বৈষম্য।

পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ বছরে অবকাঠামো উন্নয়ন ঘটেছে গ্রামে। কিন্তু গ্রাম থেকে শহরে মূল্যস্ফীতি বেশি। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জাতীয় জীবনের বড় অংকের জল যেনো গড়াতে গড়াতে মিলিয়ে যায়।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সমর রায় বলেন, ‘তথ্যগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া উচিৎ। অর্থাৎ বগুড়ার একজন কৃষক যদি জানতে পারে ঢাকায় তার পণ্যের দাম ৫০০ টাকা আছে, তাহলে ব্যবসায়ীরা তার থেকে ওই পণ্যটি ১০০ টাকায় কিনতে পারবে না। তাই নতুন যিনিই আসুক না কেন তাকে জবাবদিহিতার মধ্যে থাকতে হবে।’

আর্থিক বাজারেও সরকারি খাত আর বেসরকারি খাত এখন মুখোমুখি। টিকে থাকতে ব্যাংকগুলো কলমানি টানছে চড়া সুদে। ট্রেজারি বিলের সুদও গড়িয়েছে ১১ শতাংশের ওপর। খেলাপি ঋণের বিষফোঁড়া কাটিয়ে এবার আর্থিকখাতে সুশাসন চান অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতি বিশ্লেষক ফারুক মঈনুদ্দিন বলেন, ‘জনগণকে স্বস্তি দেয়ার জন্য যেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত সেটি গ্রহণ করতে সরকারকে পেছনে তাকালে চলবে না। ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের কথা আমরা বলছি, এই খাতের অবস্থা কিন্তু এখন ভঙ্গুর। আসলে ব্যাংকের নিয়ম মেনে যদি আমরা ঋণ দেই তাহলে কিন্তু খেলাপি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।’

বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম আর জ্বালানির বেপরোয়া ঊর্ধ্বগতিতে বেসরকারি খাতও মুখ তুলে তাকিয়ে নতুন সরকারের উদ্যোগে। জ্বালানিতে এখনো মধ্যপ্রাচ্যমুখী বাংলাদেশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দুই বছরে নতুন গ্যাস উত্তোলনের কোন সম্ভাবনা নেই। ফলে ২০২৪-২৫ সালের টপ এজেন্ডা হবে জ্বালানি নিরাপত্তা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সালেক সুফী বলেন, ‘শুধু পরিকল্পনা করলে হবে না, বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের জ্বালানিতে যে চুরি রয়েছে সেটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। মূলত জ্বালানিকে শিল্পখাতে দিতে হবে, যাতে তারা ডলার আয় করতে পারে।’

বিশ্ববাজারে প্রবাসী শ্রমিক রপ্তানি বাড়লেও বাড়ছে না রেমিটেন্স। তাই বাজারের চাহিদা ও মূল্যে দক্ষ শ্রমিক রপ্তানি নি:স্বার্থ বন্ধু হয়ে উঠবে সরকারের জন্য। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়িয়ে আরও কৌশলী হতে হবে। শিক্ষায় গুণগত পরিবর্তণে সবগুলো পক্ষকে একীভূত করে মানুষ হয়ে উঠবে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ।

গবেষক ও সমাজতত্ত্ববিদ খন্দকার সাখাওয়াত আলী বলেন, ‘আমাদের এমন শিক্ষা দরকার যেটি কর্মমুখী শিক্ষা এবং যার মাধ্যমে দেশের শ্রম বাজারে অবদান রাখা যায়। তাই সামনের ৫ বছরে এই বিষয়টা বিশেষভাবে জরুরি।’

গত ৫ বছরে দেশে সড়ক, বন্দর থেকে শুরু করে সব খাতেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে মোটা দাগে। অর্থনীতিবীদরা মনে করেন, নতুন সরকারের জন্য সেসব অবকাঠামোর উপযোগিতা প্রমাণ হবে সর্বোচ্চ ব্যবহারে। যার মাপকাঠি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জাতীয় প্রবৃদ্ধির সূচকে।