নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে চলতি বছর প্রবাসী আয় বাড়বে। সোমবার প্রকাশিত বিশ্ব ব্যাংকের সবশেষ অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন বলছে, এসব দেশে প্রবাসী আয় বাড়বে ৩.৮ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে এসব দেশে মোট প্রবাসী আয় বেড়ে দাঁড়াবে ৬৬ হাজার ৯শ’ কোটি ডলারে। এর মধ্যে প্রবাসী আয়ের সর্বোচ্চ প্রবাহ হবে যেসব দেশে, সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে এ বছর প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিশ্ব ব্যাংকের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, 'উন্নত এবং পারস্য উপসাগরীয় ধনী দেশগুলোতে বিদেশি শ্রমবাজার গতিশীল রয়েছে। তাই প্রবাসী পেশাজীবীদেরও সক্ষমতা বাড়ছে এবং উপার্জিত অর্থ তারা নিজ দেশে পাঠাতে পারছেন।'
অঞ্চলভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, প্রবাসী আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে, প্রায় আট শতাংশ। এরপরই সাত দশমিক দুই শতাংশ বেশি প্রবাসী আয় নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দক্ষিণ এশিয়া। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে তিন শতাংশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় এক দশমিক নয় শতাংশ প্রবাসী আয় বেড়েছে চলতি বছর।
অন্যদিকে, টানা দ্বিতীয় বছরের মতো মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় প্রবাসী আয় কমেছে ৫.৩ শতাংশ। মূলত মিশরে প্রবাসী আয় ব্যাপক নিম্নমূখী বলে তার প্রভাব পড়েছে পুরো অঞ্চলে। ২০২২ সালে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধির পর ইউরোপ আর মধ্য এশিয়াতেও চলতি বছর প্রবাসী আয় এক দশমিক চার শতাংশ কমেছে।
সাত শতাংশের বেশি প্রবাসী আয় প্রবাহের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো চলতি বছর ১৮ হাজার ৯শ’ কোটি ডলার গ্রহণ করবে। এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে প্রবাসী আয় বেড়েছিল ১২ শতাংশ। ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয় বৃদ্ধির পেছনে বড় অবদান ভারতের।
সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় গেছে যেসব দেশে, সে তালিকাতে শীর্ষ দেশ ভারত। শীর্ষ পাঁচে বাকি দেশগুলো হলো মেক্সিকো, চীন, ফিলিপিন্স, মিশর ও পাকিস্তান। ২০২৩ সালে ভারত সাড়ে ১২ হাজার কোটি ডলার, মেক্সিকো ৬ হাজার ৭শ’ কোটি ডলার, চীন ৫ হাজার কোটি ডলার, ফিলিপিন্স ৪ হাজার কোটি ডলার এবং মিশর ও পাকিস্তান ২ হাজার ৪শ’ কোটি ডলার করে প্রবাসী আয় গ্রহণ করেছে।
এ তালিকায় সপ্তম শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশে প্রবাসী আয় প্রবেশ করবে ২ হাজার ৩শ’ কোটি ডলার। শীর্ষ দশে বাংলাদেশের পর বাকি দেশগুলো হলো যথাক্রমে নাইজেরিয়া, গুয়াতেমালা ও উজবেকিস্তান।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল- আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং গেল বছর দেউলিয়া ঘোষিত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কাতেও প্রবাসী আয় চলতি বছর ঊর্ধ্বমুখী, বলছে বিশ্বব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে, অর্থাৎ নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা এক বছর আগের একই মাসের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। মূলত প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনে দেয়ার ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে প্রবাসীদের মধ্যে।
সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে এক হাজার ৯৯২ কোটি ডলারের বেশি। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সত্য হলে, অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ যদি দুই হাজার তিনশ’ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় গ্রহণ করে, তাহলে চলতি মাসেই দেশে আসতে হবে আরও ৩০৭ কোটি ডলার।
অন্যদিকে, প্রবাসী আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে এ বছরও তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্ব ব্যাংকের রেমিট্যান্সেস প্রাইসেস ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেটাবেজ অনুযায়ী, এ বছর প্রবাসী আয় পাঠানোর খরচ অব্যাহতভাবে বেড়েছে। ২০২৩ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতি ২শ’ ডলার দেশে পাঠাতে প্রবাসীদের গুণতে হয়েছে আরও ৬.২ শতাংশ খরচ; যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপে এ হার তুলনামূলক কম। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা ছাড়া বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলে টাকা পাঠানোর প্রশ্নে গেলো বছরের চেয়ে চলতি বছর বেশি ব্যয়বহুল।
প্রবাসী আয় পাঠানোর সবচেয়ে ব্যয়বহুল মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংকের মাধ্যমে নিজ দেশে টাকা পাঠাতে প্রবাসীদের গুণতে হয়েছে গড়ে ১২ শতাংশের বেশি খরচ। এছাড়া ডাকঘর মারফত টাকা পাঠাতে ৭ শতাংশ, অর্থ স্থানান্তর পরিষেবায় ৫.৩ শতাংশ এবং মোবাইল অপারেটরদের ৪ শতাংশের বেশি খরচ করেছেন প্রবাসীরা।
বিশ্ব অর্থনীতির দুর্বল ধারার কারণে আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে প্রবাসী আয় প্রবাহ আরও নমনীয় হবে বলে আভাস বিশ্ব ব্যাংকের। এ ধরনের নমনীয়তা অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ধীর হওয়া এবং উচ্চ আয়ের বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার দুর্বল হওয়ার পূর্বাভাস। বলা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরো অঞ্চল এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রবাসীদের আয় কমতে পারে ৫ শতাংশ।
এছাড়া বিশ্ববাজারে তেলের দামে ব্যাপক ওঠানামা, অস্থির মুদ্রা বিনিময় হার এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলোর অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত নিম্নমূখী গতিও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ঝুঁকি।