চলছিল জমজমাট নির্বাচনি প্রচারণা। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহকে ঘিরে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা। হঠাৎ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আততায়ীর গুলি। একে একে ছোড়া হয় ৭টি গুলি।
চিৎকার আর্তনাদে সবাই সটকে পড়লেও রাস্তায় পড়ে ছিলো পাঁচ খুনসহ ১৮ মামলার আসামি সরোয়ার হোসেন বাবলার মরদেহ। গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ ভাগ্যক্রমে প্রাণে বাঁচেন।
এ ঘটনায় হতবাক পুরো চট্টগ্রাম। দলীয় এক কর্মীর মোবাইলে ধারণ করা হত্যাকাণ্ডের গা শিউরে উঠা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে আতঙ্ক আরও উদ্বেগ।
এর আগে, ফিল্মি কায়দায় গেল ৭ অক্টোবর রাউজানের মদুনাঘাটে গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় বিএনপি কর্মী আবদুল হাকিমকে। গেল মার্চে এ উপজেলায় প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্রধারীদের হাতে খুন হন ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, সবশেষ একই কায়দায় যুবদল নেতা আলমসহ মোট ১৭টি খুনের ঘটনা ঘটে কেবল রাউজানেই।
নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোডে জোড়া খুন, ২৮ অক্টোবর যুবদল নেতা সাজ্জাদ খুন ও পতেঙ্গায় ঢাকাইয়া আকবর খুন- সবই হয় ভারি অস্ত্রের গুলিতে। এছাড়া প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মহড়াতো আছেই। একের পর এক এমন ভয়ংকর পরিণতি ভীতির সঞ্চার করেছে পুরো জনপদে।
আরও পড়ুন:
সাধারণ মানুষরা জানান, তারা আস্কারা পাচ্ছে। ৫ আগস্টের পর তাদের হাতে অস্ত্র চলে এসেছে। রাউজানে অবৈধ অস্ত্র চলে এসেছে। এসব অস্ত্রই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।
গত এক বছরে চট্টগ্রামে ৪৯টি খুন, রহস্যজনক মৃত্যু বা ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের মতো ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গতকাল নির্বাচনি প্রচারণায় হামলা নতুন অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। নির্বাচনের আগে এমন প্রতিহিংসা আর খুনের ঘটনা রাজনৈতিক মহলেও তৈরি করেছে শঙ্কা। যা ভাবাচ্ছে রাজনীতিবিদদের।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে একটি নির্বাচনি গণসংযোগে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এমন দুঃসাহস কোথায় পেলো।’
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বীর বিক্রম কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘বিএনপির নমিনেশন নিয়ে এরইমধ্যে বিভিন্ন জেলায় গোলাগুলি হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশ একটি অশান্ত পরিবেশের মধ্যে আছে। বিভিন্ন কারণে অশান্ত পরিবেশ কেউ চাঁদা তুলছে, কেউ পুকুর দখল করছে।’
প্রশ্ন উঠেছে এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা ও ব্যর্থতা নিয়ে। এসব সন্ত্রাসীদের অনেকে দুর্গম এলাকায় পাহাড়ি সশস্ত্র গোষ্ঠীর আশ্রয়ে থাকায় কিংবা ঘটনার পর দ্রুত মোটরসাইকেলে সটকে পড়ায় থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যা নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন খোদ কমিশনার।
সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘গহীন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল থেকে তারা বের হয়ে এসে একটি ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। রিমোট এলাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন বিষয়।’
নির্বাচন সামনে রেখে নগরীসহ জেলাগুলো চট্টগ্রামের পরিস্থিতির উন্নতি করা এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে কৌশল ঢেলে সাজানো হচ্ছে।





