মৃত্যু সনদ হওয়ার তিন দশক পর বাড়ি ফিরলেন ফেনীর মোবারক

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন | ছবি: এখন টিভি
0

কেটে গেছে জীবনের ৮৫ বছর। ৩৩ বছর ধরে নিখোঁজ। ফেনীর পরশুরামের মোবারক হোসেন ৩৩ বছর পর হঠাৎ বাড়ি ফিরলেন। তিন দশক পর হঠাৎ প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে স্বজনদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে আনন্দ-আবেগ ও খুশির কান্না।

‎১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যার পর নিরুদ্দেশ হন মোবারক হোসেন। পরশুরাম পৌরসভার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের আলী আহমদের বড় ছেলে মোবারক হোসেন।

‎মোবারকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পরে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়িতে ফেরেননি। এরপর থেকে স্বজনরা মোবারককে ৩৩ বছর ধরে খুঁজেছেন, ব্যয় করেছেন অর্থ। তবুও মেলেনি তার হদিস।

‎দীর্ঘদিন কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের কাগজপত্র ও সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা মেটাতে বাধ্য হয়ে তার নামে মৃত্যু সনদ তৈরি করে নেয় পরিবারের সদস্যরা। কয়েকদিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় এক এনজিও কর্মীর মাধ্যমে তার সন্ধান মেলে মোবারকের।

ওই কর্মী পূর্বে পরশুরাম উপজেলায় এনজিওতে চাকরি করতেন, তিনি মোবারকের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। গৌরীপুরে এক পর্যায়ে মোবারকের সঙ্গে দেখা হলে তিনি পরিচয় নিশ্চিত করতে পরশুরাম কলেজ রোডের ব্যবসায়ী আবু আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

আরও পড়ুন:

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে মোবারকের নাম, ঠিকানা ও অতীতের তথ্য মিলিয়ে নিশ্চিত হন, তিনি নিখোঁজ মোবারক। তার পরিবারের সদস্যরা ময়মনসিংহ থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।

‎মোবারকের বড় মেয়ে মঞ্জু আক্তার বলেন, ‘বাবা নিখোঁজ হওয়ার দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন, ওসি বাহার ভাই বদলি হচ্ছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। এরপর আর বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। তখন আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আজ এত বছর পর বাবাকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।’

‎পারিবারিক সূত্র জানায় জানায়, মোবারক হোসেনের দুই সংসার। প্রথম স্ত্রী আখি আক্তারের ঘরে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে এবং দ্বিতীয় স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের ঘরে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। পরে ময়মনসিংহে তিনি তৃতীয় বিয়ে করলেও সেই ঘরে কোনো সন্তান নেই। বয়সের ভারে বৃদ্ধ মোবারক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসা চলছে বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন:

‎বড় ছেলে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাবাকে খুঁজতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। ধারণা ছিল বাবা বেঁচে নেই। এখন বাবাকে ফিরে পেয়েছি,এটা আল্লাহর রহমত। তার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয়, চিকিৎসা চলছে। জায়গা সম্পদ ঠিক করতে পৌরসভা থেকে বাবার মৃত্যু সনদও তৈরি করেছিলাম। বাবা বেঁচে আছেন এটা ভাবতেই এখন অবাক লাগছে।’

‎এদিকে মোবারকের ফিরে আসার খবরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শত শত মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় করছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলাম (৭৮) বলেন, ‘আমার ও মোবারক ভাইয়ের বয়স প্রায় কাছাকাছি। একসঙ্গে বড় হয়েছি। আমরা জানতাম তিনি মারা গেছেন। তাকে ফিরে পেয়ে পুরনো সব স্মৃতি মনে পড়ছে। জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও তিনি পরিবারের কাছে ফিরেছেন, এটাই বড় সৌভাগ্য।’

এসএস