যুক্তরাজ্যে ওয়ার্ক পারমিটের লোভ; প্রতারণার জালে সিলেটবাসী

সিলেটের দুটি ট্রাভেল এজেন্সি
সিলেটের দুটি ট্রাভেল এজেন্সি | ছবি: এখন টিভি
0

বিদেশে পাঠানোর নামে সিলেটে যেন থামছেই না প্রতারণার দৌরাত্ম্য। যুক্তরাজ্যে ওয়ার্ক পারমিটের লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নানা ট্রাভেল এজেন্সি ও দালালচক্র। অবৈধ এজেন্সির এমন বেপরোয়া প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত বৈধ ব্যবসায়ীরাও। আর প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে বাড়ছে মানুষের আর্থিক ঝুঁকি, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন। দীর্ঘ ১৫ বছর প্রবাসজীবন শেষে দেশে আসেন ২০২২ সালে।প্রবাসজীবনের পুরো সঞ্চয় দিয়ে ২০২৪ সালে নেক্সট কন্সাল্টিং এজেন্সির সাথে ওয়ার্ক পার্মিটে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চুক্তি করেন ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে। চুক্তি অনুযায়ী এজেন্সিকে সব টাকা পরিশোধ করলেও ভুয়া কাগজ পত্র দেখিয়ে একসময় পালিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি।

পুরো জীবনের অর্জিত টাকা হারিয়ে এখন অনেকটাই নিঃস্ব শাহাদৎ হোসেন। টাকা উদ্ধারেও মিলছে না কোনো সহযোগিতা। তিনি বলেন, ব্যাংকে আমাকে অতিরিক্ত টাকা সুদ দিতে হয়েছে। আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা এনেছি, সেটার সুদ দিতে হচ্ছে। ফ্যামিলি চালানো এখন কষ্টকর।

এ একই প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে পাঠানোর নামে প্রতারিত হয়েছেন আরো অনেকে। কেউ দিয়েছেন ৩০ লাখ কেউবা তার চেয়ে একটু কম। প্রতারিতরা বলছেন, অনেক এজেন্সিতেই এরকম প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা যা দিন দিন বেড়েই চলছে। একজন জানান, আমার মতো এমন আরও ১০ ১২ জনের ৪ থেকে ৫ কোটির বেশি টাকা নিয়ে চলে গেছে।

বেশ কয়েকজন গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগ যাচাই করতে গিয়ে সিলেটের রোজভিউ মার্কেটে দেখা গেলো নেক্সট গ্রুপের এজেন্সির পরিচালক শাহ মোহাম্মদ ফজলুল কাদির সিদ্দীকী বর্তমানে রয়েছেন যুক্তরাজ্যে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, ব্যবসায় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে যারা টাকা পাবে বলে দাবি করছে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।

এদিকে, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈধ এজেন্সির চেয়ে অবৈধ এজেন্সি প্রতিনিয়তই প্রতারণা করছে মানুষের সাথে। প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বৈধ ব্যবসায়ীরাও।

রোজভিউ মার্কেট মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাহেল আহমদ বলেন, সিলেটে ট্রাভেলসের কোনো অভাব নেই। কিন্তু আমরা যারা বিদেশ যাওয়ার জন্য ট্রাভেলসে যাই, তাদের প্রথমে এটা জানা দরকার যে সেই ট্রাভেলসের সরকারের সিভিল এভিয়েশন সার্টিফিকেট আছে কি না। কোথাও যেতে চাইলে প্রথমে ওটা দেখতে হবে। কিন্তু যাদের সঙ্গে ব্যবসা করি তাদের অধিকাংশেরই কোনো সার্টিফিকেট নেই।

সিলেট আটাবের সদস্য আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘যাদের কোনো ধরনের কাগজপত্র নাই ওরা নামমাত্র স্পেস নিয়ে ভালো ডেকোরেট করে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে। এটার বিষয়ে প্রশাসন যেন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়।’

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ।

এসএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আমরা প্রতিটি ট্রাভেল এজেন্সিকে চিহ্নিত বা শনাক্ত করার চেষ্টা করবো। করে অবৈধ যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশের নামে প্রতারণা রুখতে যেমন জনসচেতনতা প্রয়োজন তেমনি প্রশাসনিক কঠোর নজরদারির মাধ্যমে নিরোধ করতে হবে অবৈধ ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায়ীদের।

এএইচ