নরসিংদীতে একের পর এক ঘটছে খুনের ঘটনা। ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে পরবর্তী এক বছরে খুনের ঘটনা ঘটেছে ১২০টির বেশি। আর এসময়ে মামলা হয়েছে ১১৯টি। অথচ তার আগের বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত খুনের মামলার সংখ্যা ছিলো ৬৪টি। বছর ব্যবধানে খুন ও মামলা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। জনমনে প্রশ্ন, কেন এত খুনের ঘটনা? যার কারণ অনুসন্ধান করেছে ‘এখন টেলিভিশন’।
ভুক্তভোগী পরিবার ও সংশ্লিষ্টেরা বলছেন— মাদক, ইন্টারনেট, ডিশ ও বালু ব্যবসাসহ নানা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং আধিপত্য বিস্তার এসব হত্যার মূল কারণ। সবকিছুর পেছনে রয়েছে অর্থের খেলা।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশসহ পাশের দেশ থেকে কারিগর এসেও নরসিংদীতে অস্ত্র তৈরি করছে। লাখ টাকার অস্ত্র এখানে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ হাজার টাকায়। সহজলভ্য হওয়ায় টাকার বিনিময়ে অস্ত্র দিয়ে ভাড়া খাটা সন্ত্রাসীও আছে জেলায়। এছাড়া অপরাধীরা আশ্রয় নিচ্ছে রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলে। যার পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় আছে বলে অভিযোগ অনেকের।
স্থানীয়দের একজন বলেন, ‘নরসিংদীতে খুন হয় তিনটি জিনিসে। প্রথমত নেট ব্যবসা, দ্বিতীয় হলো মাদক ব্যবসা আর হলো ডিস ব্যবসা।’
অন্য আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘তাদের অস্ত্র শক্তি আছে, অর্থনৈতিক শক্তি আছে। সেই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের সাপোর্টও রয়েছে। তারা অস্ত্র শক্তি দেখায়, তারা স্থানীয় নয়। তারা ভাড়া খাটে। তাদের কাছে খুন করা কোনো বড় বিষয় না।’
রাজনীতিতে পেশীশক্তি প্রদর্শনে সন্ত্রাসী রাজনৈতিক নেতারা খুনের সঙ্গে জড়িতদের কারামুক্ত করেন এমন তথ্যও রয়েছে, ‘টিম এখন’- এর কাছে। নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটরের কাছে প্রশ্ন ছিলো, খুনের মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়ায় কেন এত ধীরগতি?
আরও পড়ুন:
প্রশ্নের জবাবে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ এখন টেলিভিনকে বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব, চরাঞ্চলের দ্বন্দ্বে সেখানে হত্যাগুলো বেশি হচ্ছে। বিচার হচ্ছে না, কারণ অনেক সময় বাদী পক্ষ মামলা দায়ের করতে গেলে মামলাটি সঠিকভাবে লেখতে পারে না। মামলার ঘটনাগুলো লেখতে পারে না। তদন্ত কমিটির মাঝে মাঝে গাফিলতি থাকে। সেই সঙ্গে মামলগুলোর বিচার হতে অনেকদিন সময় লাগে। আবার অনেক সময় দেখা যায় মামলা হওয়ার কিছুদিন পরই বাদী এবং আসামি পক্ষ মিলে গেছে।’
গত এক বছরে ১১৯টি খুনের মামলায় মোট আসামি এক হাজার ৭১৯ জন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া আসামির সংখ্যা মাত্র ৩০২ জন। পুলিশ বারবারই বলছে, চরাঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারই খুনের মূল কারণ। এত সহিংসতায় নরসিংদীবাসীর স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা কতটুকু সে প্রশ্ন পুলিশ সুপারের কাছে।
নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এখানে আধিপত্য বিস্তার ও পারিবারিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সহিংসতায় তৈরি হয়। তার প্রেক্ষাপটে অনেকগুলো খুন হয়ে থাকে। রায়পুরা অংশে যে খুন হয়েছে এবং অন্যান্য যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি আমরা। গত কয়েক মাসে প্রায় ১৫টির মতো অস্ত্র উদ্ধার করেছি।’
নরসিংদী পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, ‘কয়েক মাসে বেশকিছু খুনের ঘটনা ঘটেছে। রহস্য উৎঘাটন বা খুনের সঙ্গে জড়িত বা অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত যে আসামিগুলো আছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমাদের জেলা পুলিশের অভিযান জোরদার করা হয়েছে।’
হত্যা যদিও মৃত্যু। তবে তা মৃত্যুর মতো চিরন্তন নয়। দিনশেষে সকলেরই প্রত্যাশা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা।




