ফিটকিরির ৫টি বিশেষ ব্যবহার
১. ডিওডোরেন্ট হিসেবে:,
ডিওডোরেন্ট হিসেবে ফিটকিরি একটি দারুণ প্রাকৃতিক বিকল্প, কারণ এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ঘাম সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং দুর্গন্ধ দূর করে, যা ত্বককে সতেজ রাখে ও জ্বালা কমায়। সরাসরি ভেজা ফিটকিরি ঘষে বা জল, গোলাপজল, মুলতানি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা রাসায়নিক ডিওডোরেন্টের ক্ষতিকর দিক এড়াতে সাহায্য করে।
ডিওডোরেন্ট হিসেবে ফিটকিরি যেভাবে কাজ করে:
- ফিটকিরি (পটাসিয়াম অ্যালুম) দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে, ফলে ঘামের দুর্গন্ধ হয় না।
- এটি ত্বকের ছিদ্রগুলোকে সংকুচিত করে ঘাম কমাতে সাহায্য করতে পারে, যদিও এটি পুরোপুরি অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট নয়।
- এতে ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে না এবং এটি ত্বককে জ্বালাতন করে না, বরং ত্বকের পিএইচ (pH) ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- সরাসরি ব্যবহার: গোসলের পর ভেজা ফিটকিরি সরাসরি বগলে হালকাভাবে ঘষে নেয়া যেতে পারে। এটি সহজে গলে যায় এবং দুর্গন্ধ প্রতিরোধ করে।
- স্প্রে হিসেবে: এক টুকরো ফিটকিরি বা গুঁড়ো জলে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে রাখার পর ভালো গন্ধের জন্য কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মেশানো যেতে পারে। এরপর তা বডি স্প্রে হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
- প্যাক হিসেবে: ফিটকিরি গুঁড়োর সাথে জল, গোলাপজল বা মুলতানি মাটি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে বগলে লাগিয়ে রেখে তা কিছুৃ সময় পর ধুয়ে ফেললে তা বগলের ঘাম বা ঘামাচির সমস্যার সমাধান করতে পারে।
২. মুখের প্যাক হিসেবে:
মুখের প্যাক হিসেবে ফিটকিরি ব্যবহার করলে তা ব্রণ, দাগ, পিগমেন্টেশন কমাতে, ত্বক পরিষ্কার করতে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনতে সাহায্য করে। কারণ এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যাস্ট্রিনজেন্ট গুণ আছে। এটি গোলাপ জল বা মধুর সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগানোর পর তা শুকিয়ে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হয়। এটি তৈলাক্ত ও ব্রণ-প্রবণ ত্বকের জন্য বেশ উপকারী।
ফিটকিরি ফেস প্যাক তৈরির পদ্ধতি:
- এক চা চামচ ফিটকিরি গুঁড়োর সাথে প্রয়োজনমতো গোলাপ জল বা সাধারণ জল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করা যেতে পারে।
- ১ চা চামচ মুলতানি মাটির সাথে ২ চা চামচ ডিমের সাদা অংশ এবং ১ চা চামচ ফিটকিরি গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা যেতে পারে।
- ১ চা চামচ ফিটকিরি গুঁড়োর সাথে ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করা যেতে পারে।
ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- প্যাক লাগানোর আগে মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- তৈরি করা প্যাকটি মুখ ও ঘাড়ে সমানভাবে লাগাতে হবে।
- ১০-১৫ মিনিট বা শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
- হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
৩. খুশকি দূর করতে ফিটকিরির ব্যবহার:
চুলের খুশকি দূর করতে ফিটকিরি দারুণ উপকারী, কারণ এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণ আছে, যা খুশকি সৃষ্টিকারী জীবাণু নাশ করে। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখে ও অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে, তবে সরাসরি না ঘষে ফিটকিরি গুঁড়ো করে পানিতে গুলে বা তেল (যেমন- নারকেল তেল) মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত, এতে মাথার ত্বক শুষ্ক হবে না বা জ্বালাপোড়া করবে না, যা ধীরে ধীরে খুশকি ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
ফিটকিরি খুশকি দূর করতে যেভাবে কাজ করে:
- এটি ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে যা খুশকির প্রধান কারণ।
- মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে এবং খোলা ছিদ্র সংকুচিত করে।
- মাথার ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- এক টুকরো ফিটকিরি নিয়ে পানিতে ভালো করে গুলে নিতে হবে, যতক্ষণ না এটি পুরোপুরি দ্রবীভূত হয়। এই ফিটকিরির জল মাথার ত্বকে লাগানোর কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
- সামান্য ফিটকিরি গুঁড়ো করে নিতে হবে। এটি নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগানোর পর হালকা ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এভাবে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রাখার পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- নিয়মিত শ্যাম্পুর সাথে সামান্য ফিটকিরি গুঁড়ো মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। এ মিশ্রণ দিয়ে চুল ধুয়ে ফেললে খুশকি ও সংক্রমণ কমতে পারে।
৪. পায়ের যত্নে ফিটকিরির ব্যবহার:
পায়ের যত্নে ফিটকিরি একটি অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে, সেইসঙ্গে এটি খুব সাশ্রয়ীও বটে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণাবলি পায়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
পায়ের যত্নে ফিটকিরি যেভাবে কাজ করে:
- ফিটকিরি শক্ত ত্বককে নরম করতে এবং ফাটা গোড়ালি নিরাময়ে সাহায্য করে।
- ফিটকিরির অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে প্রাকৃতিক ডিওডোরেন্ট হিসেবে কাজ করে।
- পায়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা অ্যাথলেটস ফুটের প্রাথমিক অস্বস্তি কমাতে ফিটকিরি সহায়ক হতে পারে
- মৃত কোষ অপসারণ করে পায়ের ত্বক নরম ও উজ্জ্বল রাখতে ফিটকিরি কার্যকর।
ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- এক বালতি হালকা গরম পানিতে এক টুকরো ফিটকিরি মিশিয়ে তাতে ১০-১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর পা শুকিয়ে নিয়ে নারকেল তেল বা ময়েশ্চারাইজার মেখে নিতে হবে।
- ফিটকিরি গরম করে গলিয়ে নিয়ে তা ঠান্ডা হলে গুঁড়ো করে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মিশ্রণটি ফাটা স্থানে লাগানো যেতে পারে।
- পা ধোয়ার পর ফিটকিরি ভেজানো পানি দিয়ে পা মুছে নিলে তা দীর্ঘক্ষণ পা ঘামমুক্ত এবং দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।
- ফিটকিরি মিশ্রিত পানি দিয়ে নিয়মিত পা ধুলে চুলকানি ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমে। তবে গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
- সপ্তাহে অন্তত দুইবার ফিটকিরি মিশ্রিত পানিতে পা ভিজিয়ে স্ক্রাব করলে পা মসৃণ থাকে।
৫. পোকার কামড় ও সাধারণ চুলকানি নিরাময়ে ফিটকিরির ব্যবহার:
পোকার কামড় এবং সাধারণ চুলকানি নিরাময়ে ফিটকিরি একটি কার্যকর ঘরোয়া সমাধান হতে পারে। ফিটকিরিতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (Astringent) এবং অ্যান্টি-সেপটিক গুণাবলি জ্বালাপোড়া ও ফোলা কমাতে সাহায্য করে।
পোকার কামড় এবং সাধারণ চুলকানি নিরাময়ে ফিটকিরি যেভাবে কাজ করে:
- মশা, মৌমাছি বা অন্যান্য ছোট পোকামাকড়ের কামড়ে ফিটকিরি ব্যবহার করে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া সম্ভব।
- ত্বকে অ্যালার্জি বা অন্যান্য কারণে হওয়া চুলকানি কমাতে ফিটকিরি বেশ কার্যকর।
ব্যবহারের নিয়মাবলী:
- ফিটকিরির একটি টুকরো সামান্য পানিতে ভিজিয়ে কামড়ানো স্থানে হালকাভাবে ঘোষলে তা ব্যথা প্রশমনে ভূমিকা রাখে।
- এছাড়া ফিটকিরি গুঁড়োর সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে আক্রান্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে।
- গোসলের পানিতে সামান্য ফিটকিরি গুঁড়ো মিশিয়ে গোসল করা যেতে পারে অথবা ফিটকিরি মেশানো পানি দিয়ে সরাসরি আক্রান্ত স্থান ধুয়ে ফেললেও তা অস্বস্তি দূর করে আরাম দেয়।
এছাড়া ত্বকের টানটান ভাব কমাতে ফিটকিরি খুব উপকারী, কারণ এর অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট গুণ ত্বকের ছিদ্র ছোট করে এবং ত্বককে শক্ত করে তোলে, যা বলিরেখা ও সূক্ষ্ম রেখা কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ, দাগ বা তৈলাক্তভাব দূর করতেও কার্যকর।
সতর্কতা:
খুব শুষ্ক বা সংবেদনশীল ত্বক হলে সরাসরি ফিটকিরি ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি জ্বালাতন করতে পারে। ব্যবহারের পর ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ত্বক যদি খুব সংবেদনশীল হয় বা ফিটকিরিতে অ্যালার্জি থাকে, তবে এটি ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। ফিটকিরি ব্যবহারের পর পা অতিরিক্ত শুষ্ক মনে হলে অবশ্যই ভালো কোনো ক্রিম বা তেল ব্যবহার করা জরুরি। সরাসরি ফিটকিরির শক্ত টুকরা মুখে ঘষা উচিত নয়, এতে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে, তাই গুঁড়ো ব্যবহার করা উচিত। সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহারের আগে অল্প জায়গায় পরীক্ষা করে নেয়া উচিত।





