নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং কী, গণতহবিল সংগ্রহে কি লঙ্ঘিত হচ্ছে নির্বাচনি আচরণবিধি?

নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং কী?
নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং কী? | ছবি: এখন টিভি
0

বাংলাদেশের নির্বাচনি রাজনীতিতে এবার এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (13th National Parliament Election) প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনি ব্যয় মেটানোর জন্য চিরাচরিত বড় দাতা বা শিল্পপতিদের ওপর নির্ভর না করে বেছে নিচ্ছেন সাধারণ জনগণের সহযোগিতা। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে তহবিল সংগ্রহের এই আধুনিক পদ্ধতিকেই বলা হচ্ছে ক্রাউডফান্ডিং (Crowdfunding)।

ক্রাউডফান্ডিং ও আইনি জটিলতা (Crowdfunding and Legal Issues)

জনগণের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুদান সংগ্রহ করে নির্বাচনি খরচ মেটানো স্বচ্ছ রাজনীতির লক্ষণ হিসেবে দেখা হলেও, এখানে একটি সূক্ষ্ম প্রশ্ন উঠেছে। প্রার্থীরা কি এর মাধ্যমে নির্বাচনি আচরণবিধি (Election Code of Conduct) লঙ্ঘন করছেন?

নির্বাচন কমিশনের (Election Commission of Bangladesh) নিয়ম অনুযায়ী, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা চালানো নিষিদ্ধ। তবে ক্রাউডফান্ডিং করার সময় প্রার্থীরা সামাজিক মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য ও যোগ্যতার কথা তুলে ধরছেন, যা অনেক ক্ষেত্রে 'আগাম প্রচারণা' (Pre-election Campaigning) হিসেবে গণ্য হতে পারে। এছাড়াও, প্রাপ্ত তহবিলের হিসাব নির্বাচনি ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা (Election Expenditure Limit) অতিক্রম করছে কি না, সেটিও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিদ্বজ্জনেরা বলছেন, প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল ক্যাম্পেইন (Digital Campaigning) এবং অনলাইন ফান্ডরাইজিং (Online Fundraising) সংক্রান্ত আচরণবিধিতে আরও স্পষ্ট নির্দেশনার প্রয়োজন।

নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং |ছবি: এখন টিভি

ক্রাউডফান্ডিং কী? স্টার্টআপ থেকে রাজনীতি—যেভাবে কাজ করে এই বিকল্প অর্থায়ন

তথ্য অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যবসা বা বিশেষ উদ্যোগ শুরু করার জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অল্প পরিমাণ করে অর্থ সংগ্রহ করা হয়, তাকেই ক্রাউডফান্ডিং (Crowdfunding) বা গণতহবিল বলা হয়। এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই অর্থ উদ্যোক্তাকে ফেরত দিতে হয় না। এটি মূলত নতুন ব্যবসা বা স্টার্টআপগুলোর জন্য ব্যাংক ঋণের একটি শক্তিশালী বিকল্প।

বিবর্তনের ইতিহাস ও বর্তমান প্রেক্ষাপট:

উৎপত্তি ও জনপ্রিয়তা: ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর যখন ব্যাংক ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, তখন ছোট ব্যবসায়ীরা বিকল্প হিসেবে এই পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করে তোলে।

প্রথম সফল উদাহরণ: সফল ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রথম আধুনিক নজির পাওয়া যায় ১৯৯৭ সালে। ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ম্যারিলিওন (Marillion) তাদের পুনর্মিলনী সফরের জন্য ভক্তদের কাছ থেকে অনলাইনে অনুদান সংগ্রহ করেছিল। এর ওপর ভিত্তি করেই ২০০১ সালে তৈরি হয় প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্ম আর্টিস্টশেয়ার (ArtistShare)।

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস: এই পদ্ধতির শিকড় অনেক গভীরে। একশ বছরেরও বেশি সময় আগে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে ‘তিলক স্বরাজ তহবিল’ গঠন করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:

গ্লোবাল ইকুইটি ক্রাউডফান্ডিং অ্যালায়েন্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ থেকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫.৮২ শতাংশ হারে এই খাতের প্রবৃদ্ধি হবে। ডিজিটাল মাধ্যমের সহজলভ্যতা একে বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল বাজারে পরিণত করেছে।

ক্রাউডফান্ডিং |ছবি: এখন টিভি

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ক্রাউডফান্ডিং: জনসমর্থন যাচাই ও অর্থায়নের নতুন অস্ত্র

রাজনৈতিক গণতহবিলের মূল দর্শন হলো বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সরাসরি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা। এটি একজন রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক এজেন্ডা সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য, তা মূল্যায়নের একটি শক্তিশালী মাপকাঠি।

১. ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট (Indian Context):

বামপন্থী দল: ভারতে ঐতিহাসিকভাবেই বামপন্থী দলগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে রাজনীতি করার জন্য পরিচিত।

ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের অন্যতম প্রাচীন দল কংগ্রেস ‘ডোনেট ফর দেশ’ (Donate for Desh) বা 'দেশের জন্য দান' শীর্ষক একটি বড় ক্রাউডফান্ডিং অভিযান শুরু করে।

আম আদমি পার্টি (AAP): দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আপ নেত্রী আতিশী মার্লেনা তার নির্বাচনি প্রচারণার জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। দ্য হিন্দু-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের খরচ মেটাতে তিনি ৪০ লাখ রুপির একটি গণতহবিল প্রচারণা চালান।

২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি (USA Context):

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রেও ক্রাউডফান্ডিংয়ের প্রভাব বিশাল। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালের নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছিলেন। তার মোট নির্বাচনি প্রচারণার তহবিলের প্রায় ৬৯ শতাংশ অর্থ এসেছিল সাধারণ মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দান (Small Donors) থেকে। এর আগে বারাক ওবামা এবং বার্নি স্যান্ডার্সও এই পদ্ধতিতে ব্যাপক সফলতা পান।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশে নির্বাচনি ক্রাউডফান্ডিং: নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা?

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের চর্চা হলো গণচাঁদা সংগ্রহ। তবে অভিযোগ রয়েছে, অনেক বড় রাজনৈতিক দল বা প্রভাবশালী রাজনীতিবিদরা বড় কোনো গোষ্ঠী বা শিল্পপতির কাছ থেকে গোপনে বিপুল অর্থ গ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে তাদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। এই ‘গোপন অর্থায়ন’ এবং ‘টাকা যার সংসদ তার’—এই পুরনো সংস্কৃতি পরিবর্তনের লক্ষ্যেই মূলত বর্তমানে ক্রাউডফান্ডিং (Crowdfunding) বা গণতহবিলের ধারণা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

১. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও নতুন ধারা (Bangladesh Context & New Trends)

বাংলাদেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ক্রাউডফান্ডিং এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও তরুণ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এই পথে হাঁটছেন। তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) যেমন—বিকাশ বা নগদের মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করছেন।

২. তাসনিম জারা ও অভাবনীয় সাফল্য (Tasnim Jara's Success)

বর্তমানে বাংলাদেশে নির্বাচনি ক্রাউডফান্ডিংয়ে সবচেয়ে বড় উদাহরণ তৈরি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (NCP) নেত্রী তাসনিম জারা। ঢাকা-৯ আসনের এই সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী তার ফেসবুক পেজে অনুদানের আবেদন জানানোর মাত্র ২৯ ঘণ্টার মধ্যে ৪৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, সাধারণ মানুষ স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক রাজনীতিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

ক্রাউডফান্ডিং ও আইনি জটিলতা |ছবি: এখন টিভি

আরও পড়ুন:

৩. ক্রাউডফান্ডিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? (Why it Matters)

স্বচ্ছতা: বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রভাবমুক্ত থেকে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হওয়া সম্ভব।

যোগ্যতার মূল্যায়ন: যার টাকা নেই কিন্তু যোগ্যতা আছে, তিনিও জনগণের সহায়তায় সংসদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন।

জনসমর্থন যাচাই: এটি প্রার্থীর প্রতি জনগণের আস্থার একটি সরাসরি প্রতিফলন।

ক্রাউডফান্ডিং কি আগাম প্রচারণা? নির্বাচনি আচরণবিধি নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা

সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ভোটগ্রহণের নির্ধারিত দিনের ৩ সপ্তাহ (২১ দিন) আগে কোনো প্রকার নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থীদের ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল সংগ্রহের হিড়িক এই আইনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তহবিলের জন্য আবেদন করার সময় প্রার্থীরা নিজের পরিচয়, লক্ষ্য এবং নির্বাচনি এজেন্ডা তুলে ধরছেন, যা পরোক্ষভাবে একটি 'নির্বাচনি প্রচারণা' (Election Campaign)। তবে বর্তমান আইনে ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিষয়টি নিয়ে আইনি বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, সদস্য জেসমিন টুলী জানান, বাংলাদেশে এর আগে ক্রাউডফান্ডিংয়ের বিষয়টি দেখা যায়নি। এটি একদমই নতুন অভিজ্ঞতা। তাই এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (EC) পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যা বা গাইডলাইন আসা জরুরি। বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও এটি প্রচারণার একটি নতুন কৌশল হতে পারে, কিন্তু যেহেতু প্রার্থী সরাসরি ভোট চাইছেন না বরং খরচ মেটানোর জন্য অর্থ চাইছেন, তাই বিদ্যমান আইন দিয়ে একে সরাসরি 'আচরণবিধি লঙ্ঘন' হিসেবে বাধা দেওয়ার সুযোগ কম।

আরও পড়ুন:

নির্বাচনি ক্রাউডফান্ডিং: স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও কালো টাকার প্রভাব মুক্ত করার নতুন লড়াই

বাংলাদেশের নির্বাচনি রাজনীতিতে গণতহবিল বা ক্রাউডফান্ডিং এক নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে এই অর্থ সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রার্থীর জন্য একটি আইনি ও নৈতিক চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি যদি সঠিকভাবে কাজ করে, তবে রাজনীতি থেকে 'পেশিশক্তি ও কালো টাকা' (Black Money) দূর করা সম্ভব হবে।

১. আরপিও (RPO) ও খরচের সীমা (Expenditure Limit):

  • গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO)-এর অনুচ্ছেদ ৪৪-এর নতুন সংযোজন অনুযায়ী:
  • একজন প্রার্থী নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ১০ টাকা খরচ করতে পারবেন।
  • প্রার্থীকে অবশ্যই তার সম্ভাব্য আয়ের উৎস (Source of Income) হলফনামায় দেখাতে হবে।
  • প্রাপ্ত যেকোনো অনুদানের (Donation) সঠিক তথ্য এবং দাতার বিবরণ সংরক্ষিত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন:

২. বিশেষজ্ঞদের অভিমত (Experts' Opinion):

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “ক্রাউডফান্ডিং একটি নতুন প্রচেষ্টা। এটি নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে। তবে প্রার্থীদের অবশ্যই আয় এবং ব্যয়ের স্বচ্ছ হিসাব (Transparency of Income and Expense) দিতে হবে।”

৩. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড (International Standards):

যুক্তরাজ্যের দ্য ইলেকটোরাল কমিশন (The Electoral Commission, UK) অনুযায়ী, ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে:

  • অর্থ কাকে দান করা হচ্ছে (ব্যক্তি নাকি রাজনৈতিক দল)।
  • অর্থ কী উদ্দেশ্যে ব্যয় হবে (প্রচারণা নাকি সাংগঠনিক কাজ)।
  • দাতার পরিচয় ও অর্থের বৈধতা যাচাই।

আরও পড়ুন:

নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং ও গণতহবিল সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর-FAQ

প্রশ্ন: নির্বাচনে ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল সংগ্রহ কী?

উত্তর: যখন কোনো নির্বাচনি প্রার্থী নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বা দলের অর্থের বাইরে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ছোট ছোট অংকের টাকা অনুদান হিসেবে সংগ্রহ করেন, তাকে ক্রাউডফান্ডিং বা গণতহবিল সংগ্রহ বলে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে নির্বাচনে গণতহবিল সংগ্রহ কি বৈধ?

উত্তর: বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী অনুদান নেওয়া নিষিদ্ধ নয়, তবে তা হতে হবে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ব্যয় সীমা এবং নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে।

প্রশ্ন: ক্রাউডফান্ডিং করলে কি নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়?

উত্তর: যদি অনুদান সংগ্রহের প্রক্রিয়া বা প্রচারণায় আচরণবিধির বাইরে গিয়ে কোনো প্রভাব বিস্তার করা হয় অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বড় অংকের অবৈধ অর্থ নেওয়া হয়, তবে তা আচরণবিধি লঙ্ঘন হতে পারে।

প্রশ্ন: একজন প্রার্থী কি নিজের প্রচারণার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে টাকা চাইতে পারেন?

উত্তর: হ্যাঁ, নৈতিকভাবে এবং আইনত প্রার্থী আবেদন করতে পারেন, তবে প্রাপ্ত অর্থের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।

প্রশ্ন: কোনো কোম্পানি বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কী প্রার্থীকে টাকা দিতে পারে?

উত্তর: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO) অনুযায়ী, কোনো কোম্পানি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা নির্বাচনি খরচের জন্য অনুদান নেওয়া নিষিদ্ধ হতে পারে।

প্রশ্ন: একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ কত টাকা নির্বাচনি ব্যয় করতে পারেন?

উত্তর: আসন প্রতি এবং ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন একটি নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেয় (যেমন ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত), এই সীমার বেশি খরচ করা দণ্ডনীয় অপরাধ।

প্রশ্ন: ক্রাউডফান্ডিংয়ের টাকা কি ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নেওয়া যায়?

উত্তর: না। নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং যাবতীয় লেনদেন সেই নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই করতে হয়।

প্রশ্ন: অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুদান চাওয়া কী আচরণবিধি ভঙ্গ?

উত্তর: অনলাইনে স্বচ্ছভাবে অনুদান চাওয়া আচরণবিধি ভঙ্গ নয়, তবে সেখানে যদি উস্কানিমূলক প্রচার চালানো হয় তবে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

প্রশ্ন: বিদেশি কোনো নাগরিক বা সংস্থা থেকে কি নির্বাচনি অনুদান নেওয়া যায়?

উত্তর: না, বিদেশি কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা রাষ্ট্র থেকে কোনো ধরনের নির্বাচনি অনুদান নেওয়া বাংলাদেশের আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

প্রশ্ন: গণতহবিল সংগ্রহের টাকা কী নির্বাচনের পর খরচ করা যায়?

উত্তর: নির্বাচনের জন্য সংগৃহীত টাকা কেবল নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যবহার করার নিয়ম। নির্বাচনের পর উদ্বৃত্ত অর্থের হিসাব কমিশনকে জানাতে হয়।

প্রশ্ন: অনুদান দাতার তথ্য কী গোপন রাখা সম্ভব?

উত্তর: স্বচ্ছতার খাতিরে বড় অংকের অনুদান দাতার নাম ও তথ্য প্রার্থীর হিসাব বইয়ে থাকা জরুরি, যাতে নির্বাচন কমিশন চাইলে তা যাচাই করতে পারে।

প্রশ্ন: বেনামী কোনো উৎস থেকে কি টাকা নেওয়া বৈধ?

উত্তর: না। কালো টাকা বা বেনামী উৎসের টাকা নির্বাচনি তহবিলে ব্যবহার করা আইনত দণ্ডনীয়।

প্রশ্ন: ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের অডিট কি বাধ্যতামূলক?

উত্তর: হ্যাঁ। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয়ের হলফনামা ও অডিট রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়।

প্রশ্ন: আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রার্থীর প্রার্থিতা কি বাতিল হতে পারে?

উত্তর: হ্যাঁ, যদি প্রমাণিত হয় যে প্রার্থী অবৈধ উৎস থেকে টাকা নিয়েছেন বা নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে বেশি খরচ করেছেন, তবে তার প্রার্থিতা বাতিল বা নির্বাচন অবৈধ ঘোষিত হতে পারে।

প্রশ্ন: ভোটারদের সরাসরি টাকা দেওয়া কি ক্রাউডফান্ডিংয়ের অংশ?

উত্তর: না। ভোটারদের সরাসরি টাকা দেওয়া "ভোট কেনা" বা দুর্নীতিমূলক আচরণ হিসেবে গণ্য হয়, যা সম্পূর্ণ অবৈধ।

এসআর