একনজরে ট্রাভেল পাশ বা ট্রাভেল পারমিট:
- সংজ্ঞা: এটি একটি জরুরি ও সাময়িক ভ্রমণ দলিল যা বিশেষ পরিস্থিতিতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে (সাধারণত নিজ দেশে) ভ্রমণের অনুমতি দেয়।
- ইস্যুকারী: নিজ দেশের সরকার, বিদেশের দূতাবাস (Embassy) বা হাই কমিশন এটি ইস্যু করে।
- প্রধান উদ্দেশ্য: যাদের বৈধ পাসপোর্ট নেই, হারিয়ে গেছে বা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা।
- ব্যবহারের ধরন: এটি একটি একমুখী (One-way) দলিল। এটি ব্যবহার করে শুধু দেশে ফেরা যায়, পুনরায় বিদেশ যাওয়া বা অন্য দেশে ভ্রমণ করা যায় না।
- বৈধতার মেয়াদ: পাসপোর্টের মতো দীর্ঘ নয়; সাধারণত ৩ মাস বা তার কম সময়ের জন্য বৈধ থাকে।
- ঐতিহাসিক উদাহরণ: 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্পেশাল পাসপোর্ট' (যা ২০১৪ সাল থেকে বন্ধ)।
- কাদের জন্য: অবৈধ প্রবাসী, পাসপোর্ট হারানো ব্যক্তি, শরণার্থী, কারাবন্দি বা নাগরিকত্বহীন ব্যক্তিদের জন্য।
- জমা দেওয়ার নিয়ম: নিজ দেশে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর বা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে এটি জমা দিতে হয়।
- পাসপোর্টের বিকল্প: এটি স্থায়ী পাসপোর্টের বিকল্প নয়, বরং বিশেষ প্রয়োজনের একটি অস্থায়ী সমাধান।
আরও পড়ুন:
ট্রাভেল পাশ কী?
সহজ কথায়, ট্রাভেল পাশ হলো পাসপোর্টের একটি বিকল্প ও অস্থায়ী সংস্করণ। এটি কোনো স্থায়ী পরিচয়পত্র নয়, বরং জরুরি প্রয়োজনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে (সাধারণত নিজ দেশে) যাওয়ার অনুমতিপত্র। বিদেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট যদি নষ্ট হয়, হারিয়ে যায় বা মেয়াদ শেষ হয়ে যায় এবং নতুন পাসপোর্ট তৈরির সময় না থাকে, তখন সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস (Embassy) তাকে একটি ট্রাভেল পাশ বা জরুরি সার্টিফিকেট ইস্যু করে। এটি ব্যবহার করে ওই ব্যক্তি আইনিভাবে তার নিজ দেশে ফিরতে পারেন।
কোন পরিস্থিতিতে ট্রাভেল পাশ দেওয়া হয়?
ট্রাভেল পাশ সবসময় দেওয়া হয় না; এটি বিশেষ কিছু পরিস্থিতির জন্য বরাদ্দ:
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে: বিদেশে থাকাকালীন পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে এবং দ্রুত দেশে ফেরার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিলে।
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে: পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু নতুন পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় নেই।
অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো: যদি কেউ অবৈধভাবে কোনো দেশে প্রবেশ করে বা ভিসা ছাড়া অবস্থান করে এবং তাকে নিজ দেশে ডিপোর্ট (Deport) বা ফেরত পাঠানো হয়।
কারাবন্দিদের প্রত্যাবাসন: বিদেশের জেলে সাজা শেষ হওয়ার পর কোনো নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সময় যদি তার পাসপোর্ট না থাকে।
জরুরি পরিস্থিতি: পরিবারের কেউ মারা যাওয়া বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে দ্রুত দেশে ফিরতে হবে কিন্তু পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতা আছে।
আউট পাস হিসেবে: আউট পাস বা সাধারণ ক্ষমার আওতায় যারা অবৈধ থেকে বৈধ হতে পারে না, তাদের নিজ দেশে পাঠানোর সময় এটি ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন:
ট্রাভেল পাশের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
এটি সাধারণত একমুখী (One-way) হয়; অর্থাৎ আপনি এটি দিয়ে শুধু নিজ দেশে ফিরতে পারবেন, পুনরায় বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই।
- এর মেয়াদ অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত থাকে (সাধারণত ১৫ দিন থেকে ৩ মাস)।
- এটি ব্যবহার করে নিজ দেশে পৌঁছানোর পর পাসটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হয়।
ট্রাভেল পাশ আবেদনের জন্য কী কী লাগে?
সাধারণত নিজ দেশের দূতাবাসে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে নিচের কাগজগুলো জমা দিতে হয়:
- হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের ফটোকপি বা নম্বর।
- নিজ দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণ (যেমন: এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন)।
- ভ্যালিড ভিসা বা ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের প্রমাণ (যদি থাকে)।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
- নির্ধারিত ফি (কিছু ক্ষেত্রে বিনামূল্যেও দেওয়া হয়)।
কেন পাসপোর্ট থাকতেও ট্রাভেল পাশ লাগে?
ধরুন, আপনি বর্তমানে মালয়েশিয়া বা সৌদি আরবে আছেন। আপনার পাসপোর্টটি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়েছে, অথবা আপনি অবৈধ হয়ে পড়েছেন। এখন আপনি বাংলাদেশে ফিরতে চান কিন্তু আপনার কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ দূতাবাস আপনাকে একটি ট্রাভেল পাশ বা আউট পাস দেবে। এটি ব্যবহার করে আপনি বিমানে চড়তে পারবেন এবং বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন।
পাসপোর্ট বনাম ট্রাভেল পাশ: মূল পার্থক্যসমূহ
বৈশিষ্ট্য পাসপোর্ট (Passport) ট্রাভেল পাশ (Travel Pass) মূল উদ্দেশ্য এটি একজন নাগরিকের আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র এবং বিশ্বের যেকোনো দেশে ভ্রমণের অনুমতিপত্র। এটি শুধুমাত্র জরুরি পরিস্থিতিতে নিজ দেশে ফিরে আসার একটি এককালীন অনুমতিপত্র। ব্যবহারের দিক এটি ব্যবহার করে একাধিকবার বিশ্বের যেকোনো দেশে যাতায়াত করা যায়। এটি সাধারণত একমুখী (One-way)। এটি দিয়ে শুধু নিজ দেশে ফেরা যায়, বিদেশ যাওয়া যায় না। মেয়াদ সাধারণত ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদী হয়ে থাকে। এর মেয়াদ খুবই কম থাকে (সাধারণত ১৫ দিন থেকে ৯০ দিন)। আকার ও ধরণ এটি একটি ছোট বই বা বুকলেট আকারে থাকে (যেমন ই-পাসপোর্ট বা এমআরপি)। এটি সাধারণত একটি কাগজের শিট বা লেটার হেড প্যাডে মুদ্রিত সার্টিফিকেট আকারে থাকে। প্রাপ্তিস্থান নিজ দেশে পাসপোর্ট অফিস থেকে এবং বিদেশে দূতাবাস থেকে পাওয়া যায়। এটি শুধুমাত্র বিদেশের দূতাবাস (Embassy) বা হাই কমিশন থেকে ইস্যু করা হয়। স্থায়ীত্ব মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এটি রিনিউ বা নবায়ন করা যায়। কাজ শেষ হওয়ার পর (দেশে ফেরার পর) এটি অকেজো হয়ে যায় এবং ইমিগ্রেশনে জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশে ট্রাভেল পাশ ইস্যুর ইতিহাস ও বর্তমান নিয়ম: যা জানা প্রয়োজন
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব যেমন রয়েছে, তেমনি বর্তমানে প্রবাসীদের জন্য এটি একটি অতি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট।
ঐতিহাসিক উদাহরণ: ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্পেশাল পাসপোর্ট
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে একটি বিশেষ ধরনের ট্রাভেল পাশ চালু ছিল, যা 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ স্পেশাল পাসপোর্ট' নামে পরিচিত ছিল। এটি মূলত বাংলাদেশি নাগরিক এবং পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দাদের জন্য ইস্যু করা হতো।
- সীমাবদ্ধতা: এই পাসপোর্টটি শুধুমাত্র ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াতের জন্য বৈধ ছিল।
- বন্ধ হওয়ার কারণ: ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (ICAO) মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তন করলে ২০১৪ সাল থেকে এই বিশেষ পাসপোর্ট প্রথাটি বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
বর্তমান প্রেক্ষাপট: ট্রাভেল পারমিট (TP)
বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কনস্যুলেটগুলো 'ট্রাভেল পারমিট (TP)' ইস্যু করে। এটি মূলত নিচের পরিস্থিতিতে দেওয়া হয়:
১. যাদের বৈধ পাসপোর্ট নেই বা হারিয়ে গেছে।
২. যাদের পাসপোর্ট নষ্ট হয়ে গেছে বা মেয়াদে জটিলতা রয়েছে।
৩. জরুরি প্রয়োজনে যাদের দ্রুত দেশে ফেরা প্রয়োজন।
ট্রাভেল পারমিটের মূল বৈশিষ্ট্য:
একমুখী যাত্রা (One-way): এটি শুধুমাত্র বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ফেরার জন্য ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর এর কার্যকারিতা শেষ হয়ে যায়।
মেয়াদ: এই পারমিটটি ইস্যু করার পর থেকে সাধারণত তিন মাস পর্যন্ত বৈধ থাকে।
ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা: এটি পাসপোর্টের বিকল্প নয়। এটি দিয়ে অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন:



