নির্বাচন কমিশন (EC) তফসিল ঘোষণার পর এ বিষয়ে আইনি বাধ্যবাধকতাগুলো স্পষ্ট করেছে।
আরও পড়ুন:
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মৌলিক শর্ত (Basic Eligibility Criteria)
সংবিধান এবং নির্বাচনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য একজন নাগরিককে নিম্নলিখিত প্রাথমিক শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:
১. নাগরিকত্ব (Citizenship): সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক (Citizen of Bangladesh) হতে হবে।
২. বয়সসীমা (Age Limit): প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে।
সংসদ নির্বাচন ২০২৬: কোন কারণে প্রার্থী হওয়া যাবে না (সংবিধান ও আরপিও অনুযায়ী)
সংবিধান ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), ১৯৭২ অনুযায়ী—
১. লাভজনক পদে কর্মরত: কেউ যদি সরকারি লাভজনক পদে (Office of Profit) কর্মরত থাকেন।
২. চাকরি থেকে বরখাস্ত/অপসারণ: দুর্নীতির অভিযোগে সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত (Dismissed), অপসারিত বা বাধ্যতামূলক অবসরপ্রাপ্ত হলে এবং সেই ঘটনার পর পাঁচ বছর পূর্ণ না হলে।
৩. চাকরি/অবসর গ্রহণের সময়: সামরিক বা সরকারি চাকরি থেকে অবসর বা পদত্যাগের পর তিন বছর পূর্ণ না হলে।
আরও পড়ুন:
৪. চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ: সরকার বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত (Contractual Appointment) হলে।
৫. ব্যবসায়িক সম্পর্ক: সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক (Business Relation) বা সুবিধা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান/সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকলে।
৬. বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী: বিদেশি রাষ্ট্র বা সংস্থার অনুদানে পরিচালিত কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পদে (Executive Post) কর্মরত ব্যক্তি কিংবা ওই পদ ছাড়ার পর তিন বছর পূর্ণ না হলে।
৭. আর্থিক খেলাপি/বকেয়া: ব্যাংক ঋণখেলাপি (Loan Defaulter), ঋণের জামিনদার হলে অথবা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, টেলিফোনসহ সরকারি সেবা বিল বকেয়া (Arrears of Utility Bills) থাকলে।
আরও পড়ুন:
আরপিও সংশোধনীতে যুক্ত হওয়া নতুন বিধিনিষেধসমূহ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরপিও (RPO) সংশোধনের মাধ্যমে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নতুন শর্তগুলো যুক্ত করা হয়েছে:
১. পলাতক বা ফেরারি আসামি (Fugitive/Absconding Accused): আদালত কর্তৃক পলাতক বা ফেরারি (Declared Fugitive) আসামি হিসেবে ঘোষিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না (Cannot Participate)।
২. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ: সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (President of Managing Committee) বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল (Holding Office) থাকলেও তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না।
৩. সরকারি দায়িত্বে বহাল: নির্বাচন কমিশন (EC) জানিয়েছে যে চলতি নির্বাচনে সরকারি দায়িত্বে থাকা কোনো ব্যক্তি পদে বহাল থেকে (While still in Office) প্রার্থী হতে পারবেন না।
এ নতুন সংশোধনীগুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতা এবং প্রার্থীদের আইনি বাধ্যবাধকতা আরও কঠোর করেছে।
ভোটাধিকারের মৌলিক তথ্য (Basic Voting Rights)
নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে বর্তমানে:
- মোট ভোটার সংখ্যা (Total Voters): নতুন তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন।
- ভোটাধিকারের মানদণ্ড: ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ভোটার তালিকাভুক্ত (Enrolled in Voter List) সবাই ভোট দিতে পারবেন।
- বিশেষ ক্ষেত্রে ভোটাধিকার: এমনকি কারাগারে থাকা বন্দিরাও (Prisoners) নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তাদের ভোটাধিকার (Right to Vote) প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
আরও পড়ুন:
ভোটাধিকার বাতিলের সাধারণ শর্ত
যদিও ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীরা ভোট দিতে পারবেন, তবে ভোটার তালিকা আইন (Voter List Act) অনুযায়ী কিছু সুনির্দিষ্ট কারণে ভোটাধিকার বাতিল হতে পারে।
ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ভোটাধিকার বাতিলের কারণসমূহ
১. মানসিক অপ্রকৃতিস্থতা: উপযুক্ত আদালত (Competent Court) যদি কাউকে মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ (Mentally Unsound) ঘোষণা করে।
২. দেউলিয়াত্ব: দেউলিয়া ঘোষণার (Declared Bankrupt) পর যদি তিনি আইনগতভাবে দায়মুক্তি (Discharge from Liability) না পান।
৩. বিদেশি আনুগত্য: স্বেচ্ছায় অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ (Acquiring Foreign Citizenship) বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য (Allegiance to Foreign State) প্রকাশ করলে।
৪. মানবতাবিরোধী অপরাধ: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে (International Crimes Tribunal Act) মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত (Convicted) হলে। (এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ভোট দেওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা উভয়ই হারাবেন।)
দ্বৈত নাগরিকদের ক্ষেত্রে নির্বাচন সংক্রান্ত নিয়মাবলী
দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এমন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ভোটাধিকার এবং প্রার্থিতা সংক্রান্ত নিয়মগুলো নিম্নরূপ:
১. ভোটাধিকার (Voting Right): দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখেন (Retains Bangladesh Citizenship) এবং ভোটার তালিকাভুক্ত (Enrolled in Voter List) থাকেন, তবে তিনি ভোট দিতে পারবেন।
২. ভোটাধিকার প্রয়োগের সুবিধা: এই নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিরা (Expatriate Bangladeshis) পোস্টাল ব্যালটের (Postal Ballot) মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
৩. প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা (Candidacy): আইন অনুযায়ী, দ্বৈত নাগরিকরা সংসদ নির্বাচনে (Parliamentary Election) প্রার্থী হতে পারবেন না (Cannot be a Candidate)। অতীতে এই কারণেই নির্বাচন কমিশন (EC) একাধিক প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছিল।
নাগরিকত্ব, আদালতের রায় এবং আইনি অবস্থানের (Legal Position) ভিত্তিতেই একজন ব্যক্তির ভোটাধিকার এবং প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হয়। ফলে যেসব নাগরিক অযোগ্যতার শর্তগুলো পূরণ করবেন না, তারা একদিকে যেমন ভোট দিতে পারবেন না, তেমনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগও হারাবেন।
এবারের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান ও নির্বাচনি আইনের (Electoral Law) কঠোর প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। নির্বাচন কমিশন (EC) কর্তৃক আরপিও-তে (RPO) যুক্ত করা নতুন বিধিনিষেধ এবং অযোগ্যতার শর্তগুলো এটাই স্পষ্ট করে যে, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক যেকোনো প্রার্থীকে অবশ্যই নৈতিক ও আইনি স্বচ্ছতা (Legal and Ethical Transparency) বজায় রাখতে হবে। আইনি অবস্থানের (Legal Position) ভিত্তিতেই ভোটাধিকার ও প্রার্থিতা নির্ধারিত হওয়ায়, সব নাগরিকের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো (Crucial Conditions) পূরণ করা বাধ্যতামূলক। এই কঠোর নিয়মাবলী একদিকে যেমন নির্বাচনকে বিতর্কমুক্ত করার প্রচেষ্টা, তেমনি অন্যদিকে এটি গণতন্ত্রে আইনি কাঠামোর (Legal Framework in Democracy) গুরুত্বকেই তুলে ধরছে।
আরও পড়ুন:




