নবম পে স্কেল কি আদৌ হচ্ছে? যা জানালো অর্থ মন্ত্রণালয়

কেন এই সরকারের আমলে আসছে না নবম পে স্কেল?
কেন এই সরকারের আমলে আসছে না নবম পে স্কেল? | ছবি: এখন টিভি
0

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নবম জাতীয় বেতন কাঠামো (9th National Pay Scale) বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরণের অনিশ্চয়তা। গত জুলাই মাসে পে কমিশন গঠন এবং ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সাম্প্রতিক মন্তব্য এবং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি এখন ভিন্ন দিকে মোড় নিয়েছে।

একনজরে নবম পে স্কেল: বর্তমান পরিস্থিতির মূল সারসংক্ষেপ

  • বাস্তবায়ন অনিশ্চয়তা: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে এটি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার।
  • সময় স্বল্পতা: আগামী ২২ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। তার আগে কমিশনের সুপারিশ যাচাই ও গেজেট প্রকাশ প্রায় অসম্ভব।
  • কর্মচারীদের আল্টিমেটাম: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় এবং বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেখা দিয়েছে।
  • কাঠামো পরিবর্তন: প্রস্তাবিত খসড়ায় বর্তমানের ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছে।
  • জুলাই ২০২৫: পে কমিশন গঠন।

  • ৯ নভেম্বর ২০২৫: অর্থ উপদেষ্টার পক্ষ থেকে পরবর্তী সরকারের ওপর সিদ্ধান্তের ভার হস্তান্তরের ঘোষণা।
  • ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫: জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা।
  • জানুয়ারি ২০২৬ (সম্ভাব্য): পে কমিশন কর্তৃক তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার সম্ভাবনা।

নতুন পে স্কেল নিয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় ১৮ লাখ সরকারি চাকরিজীবী |ছবি: এখন টিভি

অনিশ্চয়তায় নবম পে স্কেল: এই সরকারের আমলে হচ্ছে না বাস্তবায়ন! (Decision Left to Next Government)

গত ৯ নভেম্বর অর্থ উপদেষ্টা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে স্কেল বা বেতন কমিশনের (Pay Commission) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার। তিনি বলেন, "পে স্কেল ঘোষণা করা কোনো সহজ কাজ নয়, এর সঙ্গে অনেকগুলো জটিল বিষয় জড়িত।" কর্মচারীদের দেওয়া আল্টিমেটামের মধ্যে এত কম সময়ে এই বিশাল কাঠামো বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আরও পড়ুন:

নির্বাচনী তফসিল ও সময়ের সংকট (Election Schedule and Time Constraints)

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি (22nd January 2026) থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। অন্যদিকে, জাতীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ জমা হতে পারে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে। এত অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের পক্ষে সুপারিশগুলো যাচাই-বাছাই (Verification and Review) করে গেজেট প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। ফলে এই সরকারের আমলে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর না হওয়া এখন একপ্রকার নিশ্চিত।

নবম পে স্কেল আপডেট: ১ জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়নের দাবি, চূড়ান্ত পর্যায়ে পে কমিশন |ছবি : সংগৃহীত

কর্মচারীদের অসন্তোষ ও আল্টিমেটাম (Employee Dissatisfaction and Ultimatum)

পে স্কেল বাস্তবায়নে বিলম্বের খবরে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কর্মচারী নেতারা গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমার আল্টিমেটাম (Ultimatum) দিয়েছিলেন। সুপারিশ জমা দিতে দেরি হওয়ায় এবং অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্যে হতাশ হয়ে অনেক সংগঠন কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বিশেষ করে সচিবালয়ে কমিশন চেয়ারম্যানের সাম্প্রতিক বৈঠকেও খসড়া নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য আরও অন্তত তিনটি সভার প্রয়োজন বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন:

অর্থনৈতিক প্রভাব ও আগামী অর্থবছরের শঙ্কা (Economic Impact and Uncertainty for FY)

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বিশাল অংকের বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজন হওয়ায় চলতি অর্থবছরে এটি কার্যকর করা কঠিন। এছাড়া আগামী অর্থবছরেও নবম পে স্কেল কতটা গুরুত্ব পাবে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সরকার একটি কাঠামো বা ফ্রেমওয়ার্ক (Framework) তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে পরবর্তী সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারে।

নবম পে স্কেল ও পে কমিশন: প্রধান ঘটনাবলির টাইমলাইন

সময়কালপ্রধান ঘটনা ও বিবরণ
জুলাই, ২০২৫পে কমিশন গঠন: সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য দূর ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে 'জাতীয় বেতন কমিশন' গঠন করে।
জুলাই (শেষ সপ্তাহ)প্রজ্ঞাপন জারি: ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
আগস্ট - সেপ্টেম্বরমতামত গ্রহণ: অনলাইনে সরকারি কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও মতামত গ্রহণ শুরু করে কমিশন।
অক্টোবর, ২০২৫প্রত্যাশা ও ইঙ্গিত: অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রাথমিক বক্তব্যে এই সরকারের মেয়াদেই পে স্কেল বাস্তবায়নের একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেন।
৯ নভেম্বর, ২০২৫গুরুত্বপূর্ণ ইউ-টার্ন: অর্থ উপদেষ্টা জানান, নতুন পে স্কেলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার নয়, বরং আগামী নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করবে।
৩০ নভেম্বর, ২০২৫কর্মচারীদের আল্টিমেটাম: পে স্কেল বাস্তবায়নে দেরি হওয়ায় কর্মচারী নেতারা ক্ষুব্ধ হন এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার চূড়ান্ত সময়সীমা (Ultimatum) বেঁধে দেন।
ডিসেম্বর, ২০২৫আন্দোলন ও অনশন: প্রাথমিক শিক্ষকরা ১০ম গ্রেডের দাবিতে এবং অন্যান্য সংগঠন পে স্কেলের দাবিতে অনশন ও ধরণা কর্মসূচি শুরু করে।
১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫কমিশনের পর্যালোচনা সভা: সচিবালয়ে কমিশন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও আরও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা: নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ২২ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর তারিখ নির্ধারিত হয়।
জানুয়ারি, ২০২৬ (সম্ভাব্য)সুপারিশ জমা: পে কমিশন তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে জমা দিতে পারে বলে সূত্র জানায়।
জানুয়ারি (শেষ সপ্তাহ)বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা: নির্বাচনী আচরণবিধি এবং সময় স্বল্পতার কারণে এই সরকারের আমলে পে স্কেল কার্যকর হওয়া একপ্রকার নিশ্চিতভাবে থমকে যায়।

আরও পড়ুন:

নবম পে স্কেল বনাম অষ্টম পে স্কেল: তুলনামূলক বেতন ছক

নবম পে স্কেলে ২০টি গ্রেডকে কমিয়ে ১৩টি গ্রেডে রূপান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে, তাই গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। নিচে সম্ভাব্য প্রধান গ্রেডগুলোর একটি চিত্র দেওয়া হলো:

গ্রেড (Grade)বর্তমান মূল বেতন (২০১৫)প্রস্তাবিত নতুন বেতন (২০২৬)বেতন বৃদ্ধির হার (প্রায়)
সর্বোচ্চ (গ্রেড-১/২)৭৮,০০০ টাকা১,২৭,৪২৬ টাকা৬৩% - ৭০%
গ্রেড-৫৪৩,০০০ টাকা৮৩,০২০ টাকা৯৩%
গ্রেড-৮২৩,০০০ টাকা৪৪,৪০৬ টাকা৯৩%
১০ম গ্রেড (শিক্ষক/অন্যান্য)১৬,০০০ টাকা৩০,৮৯১ টাকা৯৩%
১৩তম গ্রেড১১,০০০ টাকা২১,২৩০ টাকা (সম্ভাব্য)৯২%
সর্বনিম্ন (গ্রেড-২০)৮,২৫০ টাকা১৫,৯২৮ টাকা৯৩%

আরও পড়ুন:

নবম পে স্কেল: মাসিক মোট বেতনের পূর্ণাঙ্গ ক্যালকুলেশন (সম্ভাব্য)

খাতের নাম (Component)নিম্ন গ্রেড (২০তম)মধ্যম গ্রেড (১০ম)উচ্চ গ্রেড (৫ম)শীর্ষ গ্রেড (২য়)
মূল বেতন (Basic Salary)১৫,৯২৮ টাকা৩০,৮৯১ টাকা৮৩,০২০ টাকা১,২৭,৪২৬ টাকা
বাড়ি ভাড়া (৪০% - ৫০% গড়ে)৭,১৬৭ টাকা১২,৩৫৬ টাকা৩৩,২০৮ টাকা৫০,৯৭০ টাকা
চিকিৎসা ভাতা (স্থির)২,৫০০ টাকা২,৫০০ টাকা২,৫০০ টাকা২,৫০০ টাকা
টিফিন/শিক্ষা/অন্যান্য১,৫০০ টাকা২,০০০ টাকা৩,০০০ টাকা৪,০০০ টাকা
সর্বমোট মাসিক বেতন২৭,০৯৫ টাকা৪৭,৭৪৭ টাকা১,২১,৭২৮ টাকা১,৮৪,৮৯৬ টাকা

আরও পড়ুন:

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কোন গ্রেডে কত বাড়ছে?

সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় বেতন কমিশন। কমিশন গত দশ বছরের ব্যবধানে বেতন ৯০ থেকে ৯৭ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

সরকারি চাকরির বেতন গ্রেডগ্রেড অনুযায়ী প্রস্তাবিত বেতন (টাকা)
গ্রেড-২১,২৭,৪২৬ টাকা
গ্রেড-৩১,০৯,৮০৪ টাকা
গ্রেড-৪৯৬,৫৩৪ টাকা
গ্রেড-৫৮৩,২০৮ টাকা
গ্রেড-৬৬৮,৫৩৯ টাকা
গ্রেড-৭৫৫,৯৯০ টাকা
গ্রেড-৮৪৪,৪০৬ টাকা
গ্রেড-৯৪২,৪৭৫ টাকা
গ্রেড-১০৩০,৮৯১ টাকা
গ্রেড-১১২৪,১৩৪ টাকা
গ্রেড-১২২১,৮১৭ টাকা
গ্রেড-১৩২১,২৩৮ টাকা
গ্রেড-১৪১৯,৬৯৩ টাকা
গ্রেড-১৫১৮,৭২৮ টাকা
গ্রেড-১৬১৭,৯৫৫ টাকা
গ্রেড-১৭১৭,৩৭৬ টাকা
গ্রেড-১৮১৬,৯৯০ টাকা
গ্রেড-১৯১৬,৪৪১ টাকা
গ্রেড-২০১৫,৯২৮ টাকা


এসআর