এলাকাভিত্তিক অ্যাপার্টমেন্টের দামের চিত্র (Area-wise Flat Prices):
১. অভিজাত এলাকা (Premium Areas): গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম এখনো আকাশচুম্বী। এসব এলাকায় নতুন অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গফুট মূল্য (Price per Square Foot) ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে কূটনৈতিক অঞ্চলগুলোতে লাক্সারি অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
২. মধ্যম আয়ের এলাকা (Mid-range Areas): ধানমন্ডি ও উত্তরা এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম সাধারণত ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকার মধ্যে। তবে ধানমন্ডির পুরোনো ব্লকে কিছুটা কম দামে ফ্ল্যাট পাওয়া গেলেও নতুন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন প্রকল্পে দাম বেশি। অন্যদিকে, মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও আদাবরের মতো জনপ্রিয় এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল সংলগ্ন (Near Metro Rail) এলাকাগুলোতে দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
৩. উদীয়মান ও প্রান্তিক এলাকা (Emerging Zones): আফতাবনগর, বাড্ডা, খিলগাঁও ও দক্ষিণখানের মতো এলাকাগুলোতে প্রতি বর্গফুট অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৬ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে। ঢাকার প্রান্তিক এলাকাগুলোতে কম দামে বড় ফ্ল্যাট (Big Flats at Lower Price) পাওয়ার সুযোগ থাকলেও যাতায়াত ও নাগরিক সুবিধার বিষয়টি ক্রেতারা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছেন।
আরও পড়ুন:
বাজার স্থিতিশীল থাকার কারণ (Market Stability Factors)
আবাসন খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, নির্মাণসামগ্রীর দাম কিছুটা কমলেও জমির চড়া দাম ও রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি হওয়ার কারণে ফ্ল্যাটের দাম খুব একটা কমছে না। তবে বর্তমানে চলমান রিহ্যাব ফেয়ার ২০২৫ (REHAB Fair 2025) উপলক্ষে অনেক কোম্পানি বিশেষ ছাড় ও কিস্তি সুবিধা প্রদান করছে, যা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
নিচের দামগুলো শীর্ষস্থানীয় আবাসন কোম্পানি ও বাজারসংশ্লিষ্ট সূত্রের সাথে কথা বলে সংগৃহীত। এটি একটি আনুমানিক গড় মূল্যের তালিকা; তবে প্রকল্পের অবস্থান, সুযোগ-সুবিধা ও নির্মাণ শৈলী ভেদে দাম কমবেশি হতে পারে।
এলাকার ধরন এলাকার নাম প্রতি বর্গফুট আনুমানিক দাম (টাকা) অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ২০,০০০ — ৩০,০০০+ উন্নত আবাসিক ধানমন্ডি, উত্তরা (পুরোনো সেক্টর) ১২,০০০ — ১৮,০০০ জনপ্রিয় মধ্যবিত্ত এলাকা মিরপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর ৮,০০০ — ১২,০০০ বাণিজ্যিক ও সংযোগ এলাকা বাসাবো, খিলগাঁও, রামপুরা ৯,০০০ — ১৩,০০০ উদীয়মান এলাকা আফতাবনগর, বাড্ডা, দক্ষিণখান ৬,৫০০ — ৯,০০০ প্রান্তিক এলাকা কেরানীগঞ্জ, পূর্বাচল সংলগ্ন ৬,০০০ — ৮,৫০০
মনে রাখা জরুরি, এই দামগুলো বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তনশীল। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশন থেকে দূরত্ব, ভবনের ফ্লোর লেভেল, পার্কিং সুবিধা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সুনামের ওপর ভিত্তি করে একই এলাকায় দামের উল্লেখযোগ্য পার্থক্য হতে পারে।
আরও পড়ুন:
একনজরে দাম বৃদ্ধির তুলনামূলক চিত্র:
এলাকার নাম মেট্রোরেল পূর্ববর্তী দাম (বর্গফুট) বর্তমান আনুমানিক দাম (২০২৫-২৬) দিয়াবাড়ি/উত্তরা ৫,৫০০ - ৭,০০০ টাকা ৮,০০০ - ১২,০০০ টাকা মিরপুর (শেওড়াপাড়া) ৬,০০০ - ৭,৫০০ টাকা ৯,০০০ - ১৩,০০০ টাকা আগারগাঁও ৭,০০০ - ৮,৫০০ টাকা ১০,০০০ - ১৪,০০০ টাকা ফার্মগেট/মণিপুরীপাড়া ১০,০০০ - ১২,০০০ টাকা ১৪,০০০ - ২০,০০০ টাকা
বিশেষ দ্রষ্টব্য: মেট্রোরেলের কারণে শুধু ফ্ল্যাটের দামই নয়, এসব এলাকায় ফ্ল্যাটের ভাড়ার পরিমাণও গড়ে ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
ফ্ল্যাট কেনার সময় আইনি কাগজপত্র যাচাইয়ের নির্দেশিকা
ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনাকে প্রধানত তিনটি ধাপে কাগজপত্র যাচাই করতে হবে: জমির মালিকানা, ভবনের অনুমোদন, এবং ফ্ল্যাট মালিকের বৈধতা।
১. জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল (Land Ownership Documents):
মূল দলিল (Original Deed): জমির মূল মালিকানা কার নামে সেটি নিশ্চিত হতে হবে। যদি জমিটি একাধিকবার হাতবদল হয়, তবে ভায়া দলিল (Via Deeds) বা বায়া দলিলগুলো সংগ্রহ করুন।
খতিয়ান বা পর্চা (Khatian/Porcha): জমিটি সিএস (CS), এসএ (SA), আরএস (RS) এবং মহানগর জরিপ (City Survey) অনুযায়ী সঠিক আছে কি না এবং খতিয়ানে মালিকের নাম ঠিক আছে কি না তা যাচাই করুন।
নামজারি বা মিউটেশন (Mutation): বর্তমান বিক্রেতা বা জমির মালিকের নামে সরকারিভাবে নামজারি করা আছে কি না এবং হোল্ডিং নম্বর ঠিক আছে কি না নিশ্চিত হোন।
দাখিলা বা খাজনা রসিদ (Tax Receipt/Dakhila): সর্বশেষ অর্থবছরের ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা পরিশোধ করা হয়েছে কি না তা দেখুন।
২. ভবনের অনুমোদন ও রাজউক/কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র (Building Approval):
রাজউক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন (RAJUK/CDA/KDA Approval): ভবনটি রাজউক বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তৈরি হচ্ছে কি না তার নকশা বা প্ল্যান চেক করুন।
নকশা বহির্ভূত নির্মাণ (Deviation): অনুমোদিত নকশার বাইরে কোনো বাড়তি তলা বা অংশ নির্মাণ করা হয়েছে কি না তা যাচাই করুন। বিচ্যুতি থাকলে পরবর্তীকালে ভবনটি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
অনাপত্তি পত্র (NOC): বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা এবং ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র আছে কি না তা দেখে নিন।
৩. ডেভেলপার ও মালিকের চুক্তি (Developer-Owner Agreement):
আমমোক্তারনামা (Power of Attorney): যদি ফ্ল্যাটটি কোনো ডেভেলপার কোম্পানি বিক্রি করে, তবে জমির মালিক তাদের জমি উন্নয়ন ও ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য আইনত 'পাওয়ার অব অ্যাটর্নি' দিয়েছে কি না তা যাচাই করুন।
অ্যালটমেন্ট লেটার (Allotment Letter): আপনার নামে ফ্ল্যাটটি বরাদ্দ করার পর কোম্পানি থেকে বরাদ্দপত্র বুঝে নিন।
৪. অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সনদ:
অভারডু বা দায়বদ্ধতা যাচাই (Non-Encumbrance Certificate): জমি বা ফ্ল্যাটটি কোনো ব্যাংকে বন্ধক (Mortgage) রাখা আছে কি না তা সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে যাচাই করে নিন।
শেয়ার অব ল্যান্ড (Share of Land): ফ্ল্যাট ক্রয়ের দলিলে ফ্ল্যাটের আয়তনের পাশাপাশি ওই জমির কতটুকু অংশ আপনি পাচ্ছেন (Undivided and Undemarcated Land Share) তা স্পষ্টভাবে লেখা আছে কি না দেখে নিন।





