এটি সিলেটের আম্বরখানা। এখান থেকেই প্রতিদিন ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ছুটে যান পর্যটকরা। শীত মৌসুমে যেখানে পর্যটকের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো, সেখানে এবার দৃশ্য ভিন্ন। নির্বাচন কেন্দ্রিক নিরাপত্তা শঙ্কা, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের দুরবস্থা এবং সাম্প্রতিক সাদাপাথর কাণ্ড সব মিলিয়ে দিশেহারা পর্যটন শিল্প।
সাদাপাথর পরিবহনের নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল হক চৌধুরী বলেন, ‘পর্যটনখাতে হোটেল-মোটেল, পরিবহনসহ, দিনমজুরসহ বিভিন্ন সেক্টর যেভাবে জড়িত, সেগুলোর সেভাবে সাড়া মিলছে না এবং আমাদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।’
ওয়াইট হাউজ রিসোর্টের মার্কেটিং ডিরেক্টর শিশির সরকার বলেন, ‘আমাদের ১০ থেকে ২০ শতাংশ ব্যবসা হচ্ছে না। নভেম্বর মাস চলে গেছে, ডিসেম্বর মাস চলে আসছে, তবে আমাদের ব্যবসাটা হচ্ছে না। আমাদের যারা স্টাফ আছে, সেইসঙ্গে এই বিল্ডিংয়ের খরচ দিয়ে এ ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মতো মানসিকতাই আমরা পাচ্ছি না।’
পরিসংখ্যান বলছে, শীত মৌসুমে জেলায় প্রবাসী পর্যটকের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি থাকলেও এবছর তা প্রায় শূন্যে। ফলে মাসের বেশিরভাগ সময় ফাঁকা পড়ে থাকছে পর্যটন কেন্দ্র। ভরা মৌসুমে প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কম পর্যটক আসায় কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতিদিনের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
আরও পড়ুন:
হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিবরিয়া আহমদ বলেন, ‘আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। সবগুলো হোটেলেই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বুকিং, যেটা ভরা মৌসুমে আমরা ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আশা করি। প্রতি মাসে শুধু সরকারকেই আমরা ৩ থেকে ৪ কোটি টাকা ভ্যাট দিয়ে থাকি, সেটা থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা সেল করতে না পারলে, সরকারকে ভ্যাট কী দেবো?’
দি সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমেদ বলেন, ‘বাইরের পর্যটক আসলে আমাদের ফরেন রেমিট্যান্সটা আসতো। সেক্ষেত্রে সবক্ষেত্রেই আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা আশা করছি, আগামী নির্বচনের পর হয়তো এ ব্যাপারে কিছু হবে।’
জেলা প্রশাসনের দাবি, সিলেটে বর্তমানে কোনো নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নেই। তাদের মতে, সড়ক অবকাঠামোর দুরবস্থাই পর্যটন খাতের স্থবিরতার প্রধান কারণ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম বলেন, ‘ঢাকা থেকে সিলেটে আসতে অনেক লম্বা সময় লেগে যায়, যেহেতু রাস্তায় কাজ চলছে। আর তাছাড়া বিমান ভাড়াও অনেক বেশি। এসব কারণেও পর্যটক অনেক কম আসছে বলে আমি মনে করছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই, কারণ আমরা মনে করি যে, সিলেট শহর এই মুহূর্তে সবচেয়ে নিরাপদ একটি এলাকা। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছে, সবাই তৎপর আছে, আমরা তৎপর আছি। তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা যেটা হচ্ছে যে, নির্বাচন যেহেতু ঘনিয়ে আসছে, সবাই নির্বাচনমুখী হয়ে গেছে। আর দ্বিতীয় যে বিষয়, তা হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা।’
ঢাকা–সিলেট মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কের বেহাল দশা, সাদাপাথর কাণ্ড এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক ব্যস্ততায় ধারাবাহিক ক্ষতির মুখে সিলেটের পর্যটন শিল্প। তবে উদ্যোক্তাদের আশা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন হলে, ঈদের মৌসুমে আবারও প্রাণ ফিরবে সিলেটের পর্যটনে।





