টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের রাজকীয় রেকর্ড; ৪৫ বার 'ম্যাচসেরা' হয়ে বিশ্বতালিকায় চারে

রেকর্ডবুকে সাকিবের নতুন ধামাকা: টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ বার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’!
রেকর্ডবুকে সাকিবের নতুন ধামাকা: টি-টোয়েন্টিতে ৪৫ বার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’! | ছবি: এখন টিভি
0

বাইশ গজে সাকিবের জাদুকরী উপস্থিতি মানেই নতুন কোনো রেকর্ডের হাতছানি। প্রায় দুই দশক ধরে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের আধিপত্য ধরে রাখা সাকিব আল হাসান (Shakib Al Hasan) স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে (Twenty20 Cricket) আবারও এক অবিশ্বাস্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন। গতকাল ((রোববার, ২১ ডিসেম্বর) রাতে আন্তর্জাতিক লিগ টি-টোয়েন্টিতে (ILT20) ৪৫তম বারের মতো 'ম্যাচসেরা' (Player of the Match) হওয়ার অনন্য মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। এই অর্জনের মাধ্যমে তিনি ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে বিশ্বতালিকায় যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছেন।

একনজরে: সাকিব আল হাসানের ৪৫তম ম্যাচসেরা ও ক্যারিয়ার মাইলফলক

  • সর্বশেষ অর্জন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৪৫তম বার ম্যাচসেরা (Man of the Match) হওয়ার গৌরব।
  • বর্তমান অবস্থান: বিশ্বের সব খেলোয়াড়দের মধ্যে যৌথভাবে ৪র্থ (অ্যালেক্স হেলস ও রশিদ খানের সাথে)।
  • ম্যাচ সংখ্যা: এই অর্জনে পৌঁছাতে সাকিবের লেগেছে ৪৬৫ ম্যাচ (হেলস ও রশিদের চেয়ে অনেক কম)।
  • সর্বশেষ পারফরম্যান্স: এমআই এমিরেটসের হয়ে ৪ ওভারে ১৪ রানে ২ উইকেট এবং অপরাজিত ১৭* রান।

এমআই এমিরেটসের হয়ে সাকিবের ভেলকি (Shakib's performance for MI Emirates)

রোববার রাতে এমআই এমিরেটসের হয়ে মাঠে নেমে প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাকানিচুবানি খাইয়েছেন সাকিব। বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে শিকার করেন ২ উইকেট (2 wickets for 14 runs)। পরে ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৭ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। এই অলরাউন্ড নৈপুণ্যের (All-round masterclass) স্বীকৃতি হিসেবে তার হাতে ওঠে ক্যারিয়ারের ৪৫তম টি-টোয়েন্টি ম্যাচসেরার পুরস্কার।

ম্যাচ সংখ্যার ব্যবধানে রশিদ ও হেলসকে পেছনে ফেললেন সাকিব

টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ৪৫ বার ম্যাচসেরা হয়ে সাকিব এখন ইংল্যান্ডের বিধ্বংসী ওপেনার অ্যালেক্স হেলস (Alex Hales) এবং আফগান স্পিন তারকা রশিদ খানের (Rashid Khan) পাশে নাম লিখিয়েছেন। তবে পরিসংখ্যানে সাকিব তাদের চেয়েও এক ধাপ এগিয়ে। হেলস যেখানে এই মাইলফলকে পৌঁছাতে ৫২৪টি ম্যাচ খেলেছেন এবং রশিদ খানের লেগেছে ৫০৪ ম্যাচ, সেখানে সাকিব মাত্র ৪৬৫ ম্যাচেই (465 Matches) এই অর্জন পূর্ণ করেছেন। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিবের প্রভাব (Impact in T20) কতটা গভীর।

তালিকার শীর্ষে কারা? (Who are at the top?)

টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরা হওয়ার তালিকায় সাকিবের ওপরে রয়েছেন: ১. ক্রিস গেইল (Chris Gayle): 'ইউনিভার্স বস' খ্যাত এই ক্যারিবিয়ান তারকা তালিকায় শীর্ষে। ২. বিরাট কোহলি (Virat Kohli): ভারতের এই ব্যাটিং কিংবদন্তি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। ৩. অ্যালেক্স হেলস (Alex Hales): ইংল্যান্ডের এই বিধ্বংসী ওপেনার তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।

টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি ম্যাচসেরার তালিকা:

অবস্থানখেলোয়াড়ের নামদেশের নামম্যাচ সংখ্যাম্যাচসেরা (বার)
ক্রিস গেইলওয়েস্ট ইন্ডিজ৪৬৩৬০
কাইরন পোলার্ডওয়েস্ট ইন্ডিজ৭২৮৪৮
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলঅস্ট্রেলিয়া৪৮৯৪৮
সাকিব আল হাসানবাংলাদেশ৪৬৫৪৫

১৯ বছরের অবিরাম পথচলা (19 years of cricketing journey)

২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক (Debut against Zimbabwe in 2006) হওয়ার পর থেকে ১৯ বছর ধরে সাকিব টি-টোয়েন্টি খেলে যাচ্ছেন। যদিও জাতীয় দলের হয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে (T20 World Cup 2024) তাকে শেষবার দেখা গেছে, তবে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে (Franchise Leagues) সাকিবের চাহিদা এখনও তুঙ্গে।

সাকিব আল হাসানের এই অর্জন কেবল তার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও এক পরম গর্বের মুহূর্ত। তার এই অসামান্য অর্জন প্রমাণ করে যে, বয়স কেবল একটি সংখ্যা মাত্র। ১৯ বছর ধরে বাইশ গজে নিজের আধিপত্য বজায় রাখা কোনো সাধারণ বিষয় নয়। ৪৬৫ ম্যাচে ৪৫ বার ম্যাচসেরার এই রেকর্ড তাকে কিংবদন্তিদের কাতারে পৌঁছে দিয়েছে। ভক্তদের আশা, পোলার্ড এবং ম্যাক্সওয়েলের ৪৮টি ম্যাচসেরার রেকর্ড ভেঙে সাকিব খুব শীঘ্রই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবেন এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকাকে আরও উঁচুতে তুলে ধরবেন এবং লাল-সবুজের পতাকাকে ক্রিকেট বিশ্বের শিখরে নিয়ে যাবেন।

সাকিব আল হাসান দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারে নিজেকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের প্রধান অর্জন ও পরিসংখ্যানগুলো নিচে টেবিল আকারে দেওয়া হলো:

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিসংখ্যান (International Stats)

সাকিব আল হাসান বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেটার যিনি তিন ফরম্যাটেই সমানভাবে সফল।

ফরম্যাটম্যাচরানসর্বোচ্চ রান১০০/৫০উইকেটসেরা বোলিং৫/১০ উইকেট
টেস্ট (Test)৭১৪,৬০৯২১৭৫/৩১২৪৬৭/৩৬১৯/২
ওয়ানডে (ODI)২৪৭৭,৫৭০১৩৪*৯/৫৬৩১৭৫/২৯৪/০
টি-টোয়েন্টি (T20I)১২৯২,৫৫১৮৪০/১৩১৪৯৫/২০২/০
মোট৪৪৭১৪,৭৩০২১৭১৪/১০০৭১২৭/৩৬২৫/২

টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার (International + Franchise)

বিশ্বের বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে (আইপিএল, বিপিএল, সিপিএল, আইএলটি২০) সাকিবের দাপুটে পারফরম্যান্স:

ক্যাটাগরিপরিসংখ্যান
মোট টি-টোয়েন্টি ম্যাচ৪৬৫টি
মোট ম্যাচসেরা (Man of the Match)৪৫ বার (বিশ্বতালিকায় যৌথভাবে ৪র্থ)
মোট টি-টোয়েন্টি উইকেট৪৯০+ (প্রায়)
আইপিএল শিরোপা (IPL Titles)২ বার (২০১২, ২০১৪ - কেকেআর-এর হয়ে)
বিপিএল শিরোপা (BPL Titles)৩ বার (২০১২, ২০১৩, ২০১৬)

সাকিবের বিশেষ কিছু বিশ্বরেকর্ড (Major World Records)

১ নম্বর অলরাউন্ডার: ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসের এক পর্যায়ে তিন ফরম্যাটেই (Test, ODI, T20) একই সাথে আইসিসি-র ১ নম্বর অলরাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

দ্রুততম ডাবল: ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ৫,০০০ রান এবং ২৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড সাকিবের দখলে।

বিশ্বকাপের অনন্য কীর্তি: ২০১৯ বিশ্বকাপে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এক আসরে ৬০০+ রান এবং ১০+ উইকেট নেওয়ার অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়েন।

১০ উইকেট ও সেঞ্চুরি: টেস্ট ইতিহাসের মাত্র ৩ জন ক্রিকেটারের একজন, যারা একই টেস্ট ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ১০ উইকেট শিকার করেছেন।

বিশ্বকাপে ১০০০ রান ও ৩০ উইকেট: বিশ্বকাপের ইতিহাসে একমাত্র ক্রিকেটার যার ঝুলিতে ১০০০-এর বেশি রান এবং ৩০-এর বেশি উইকেট রয়েছে।

৯টি দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট: বিশ্বের মাত্র ৪ জন বোলারের একজন, যারা টেস্ট খেলুড়ে অন্য ৯টি দেশের বিপক্ষেই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

ব্যক্তিগত সম্মাননা ও পুরস্কার

  • ম্যান অব দ্য সিরিজ: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১৬ বার সিরিজ সেরা (Man of the Series) হয়েছেন।
  • উইজডেন ক্রিকেটার: ২০০৯ সালে উইজডেন কর্তৃক বিশ্বের সেরা টেস্ট ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।
  • বিপিএল সেরা: রেকর্ড ৪ বার বিপিএল-এর টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন।

সাকিবের ক্যারিয়ার সামারি (২০০৬-২০২৫)

  • অভিষেক: ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (টি-টোয়েন্টি)।
  • আন্তর্জাতিক উইকেট: ৭১২টি (তিন ফরম্যাট মিলিয়ে)।
  • আন্তর্জাতিক রান: ১৪,৭৩০ রান।
  • সিরিজ সেরা (Man of the Series): ১৬ বার।

এসআর