বাংলাদেশ বীরদের দেশ, শুধু তাদের চিনে নিতে হবে: প্রেস সচিব

প্রেস সচিব শফিকুল আলম
প্রেস সচিব শফিকুল আলম | ছবি: সংগৃহীত
0

দুই দিনে অংশ নিয়েছেন তিনটি জানাজায়। বিদায় জানিয়েছেন রাজনীতির মাঠের তরুণ তুর্কী থেকে শুরু করে একাত্তরের কিংবদন্তি সেনানায়ককে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ (সোমবার, ২২ ডিসেম্বর) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক আবেগঘন স্ট্যাটাসে এসব বীরদের স্মৃতিচারণ করেছেন।

শফিকুল আলম তার পোস্টে শরিফ ওসমান হাদিকে একজন ‘তরুণ নায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, রাজনীতিতে ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হাদি ছিলেন এক সতেজ কণ্ঠস্বর। তার জানাজায় লাখ লাখ মানুষের অংশগ্রহণ—কারও মতে যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছিল; প্রমাণ করে যে তিনি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

শফিকুল আলম লিখেন, শরীফ ওসমান হাদি ছিলেন এক অনন্য বিস্ময়, যিনি আমাদের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন। তার জ্বালাময়ী ও সুনিপুণ বক্তব্য আগামী প্রজন্মের বিদ্রোহীদের অনুপ্রাণিত করবে। তার নিঃস্বার্থ কর্মতৎপরতা ভবিষ্যতে আমাদের সক্রিয়তাবাদের (অ্যাক্টিভিজম) ধরন বদলে দেবে।

সুদানে ড্রোন হামলায় নিহত ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর প্রতিও শ্রদ্ধা জানান প্রেস সচিব। তিনি তাদের ‘শান্ত গ্রাম থেকে আসা নিভৃত বীর’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এই বীররা কেউ ছিলেন স্বামী, কেউ তরুণ বাবা, আবার কেউ বাবা-মায়ের অতি আদরের সন্তান।

আরও পড়ুন:

তিনি লিখেন, তাদের বিদায় অনুষ্ঠান ছিল মর্যাদা ও গাম্ভীর্যপূর্ণ। আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং জাতিসংঘ কর্মকর্তারা এই তরুণদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেছেন, যারা বিশ্বের এক অস্থিতিশীল প্রান্তে শান্তি ফেরাতে জীবন দিয়েছেন। বাংলাদেশের এমন অনেক নিভৃত বীর আছেন, যারা ঘর থেকে দূরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।

মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকারকে নিয়ে শফিকুল আলম দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ৩৪০০ ঘণ্টা যুদ্ধবিমান ওড়ানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এই মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে। কাজ শেষে লুঙ্গি পরে পরিবারের সাথে সময় কাটাতেই তিনি বেশি পছন্দ করতেন।

প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, ১৯৭১ সালে দেশমাতৃকার ডাকে এই শান্ত মানুষটিই পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি গঠন করেন ঐতিহাসিক ‘কিলো ফ্লাইট’, যা মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত ভূমিকা রেখেছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিলেন এই জ্যেষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান (জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা) গঠনেও তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

শফিকুল আলম আরও লিখেন, পরবর্তী সময়ে তিনি শেখ হাসিনার ইতিহাসের সংস্করণকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এবং এর জন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছিল। অবসরে পাবনার গ্রামের বাড়িতে বোনা সুন্দর লুঙ্গি পরে তিনি পড়তে ও লিখতে ভালোবাসতেন।

নিজের স্ট্যাটাসের শেষে শফিকুল আলম এক গভীর সত্য উচ্চারণ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ বীরদের দেশ, যদি আপনি জানেন কোথায় তাদের খুঁজতে হবে।’

এনএইচ