দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনের ক্ষতচিহ্ন এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি গাজাবাসী। কখনও ইসরাইলি আচমকা হামলা কিংবা কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত, সবকিছু মিলিয়ে দুঃখ আর দুর্দশাকে সাক্ষী রেখেই দিন কাটাচ্ছে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটির লাখ লাখ মানুষ।
আন্তর্জাতিক চাপ ও একের পর এক দেশের ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির মাঝে অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। তবে গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি নিয়ে জানিয়ে আসছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
এরইমধ্যে গেল সোমবার ট্রাম্পের প্রস্তাব করা ২০ দফা শান্তিচুক্তির বিষয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নেয় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা। এতে পাস হয় স্থিতিশীলতা রক্ষায় গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাবটি। তবে তা প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছে হামাস।
গতকাল (মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর) হামাস জানায়, বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী গাজায় বহুজাতিক বাহিনী গঠন করা হলে ক্ষুণ্ণ হবে ফিলিস্তিনিদের অধিকার। ইসরাইলি মদতপুষ্ট দেশগুলোর সমন্বয়ে গাজায় শান্তি বাহিনী গঠন হলে তা রুখে দিতেও প্রস্তুত গোষ্ঠীটি।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাশেম বলেন, ‘প্রস্তাবে ইসরাইলি দাবিগুলো প্রাধান্য পেলেও ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। নেতানিয়াহু চায় না যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকুক। বরং তিনি গাজায় নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত।’
আরও পড়ুন:
তবে ভিন্ন কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। গাজায় দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক বলেছেন তারা।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহীন বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রস্তাব দীর্ঘমেয়াদী শান্তি অর্জনের একটি প্রথম ধাপ। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিদের বাঁচাতে এটি গুরুত্বপূর্ণ।’
এদিকে হোয়াইট হাউজে সৌদি যুবরাজের আগমন উপলক্ষে আয়োজিত ডিনার অনুষ্ঠানে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘শান্তি পরিষদের আকার বড় হবে। কেননা এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা থাকবেন। এমন অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা আগে কখনও হয়নি। এর সভাপতি হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
এদিকে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা নিয়ে সৌদি আরবকে ট্রাম্প বার বার চাপ দিলেও যুবরাজ সালমান বলছেন- দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ছাড়া তা সম্ভব নয়।
তবে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির কথা বললেও যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে লেবাননের একটি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তেল -আবিবের দাবি, সন্ত্রাসীদের দমনে পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে তারা। তবে অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলছে লেবানন সরকার।
অন্যদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে গাজার মানবিক সংকট বেড়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। শীতে সংকট আরও বাড়বে শঙ্কায় উপত্যকাটিতে ত্রাণসামগ্রী প্রবেশের জন্য সবগুলো করিডোর খুলতে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।





