মাদক চোরাচালান ইস্যু ঘিরে ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা চরমে

ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা
ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা | ছবি: সংগৃহীত
0

মাদক চোরাচালান ইস্যুতে ভেনেজুয়েলা ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপে উদ্বিগ্ন ভেনেজুয়েলা সরকার। এমনকি ভেনেজুয়েলা উপকূলে মার্কিন নৌসেনাদের উপস্থিতি বাড়ানোর ঘটনায় ভেনেজুয়েলা-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা পৌঁছেছে চরমে। প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ট্রাম্প এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে আভাসও মিলছে। সত্যিই যদি যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায় তাহলে মাদুরো প্রশাসন তা ঠেকাতে কতটা প্রস্তুত, তাই এখন বড় প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালান বন্ধের লক্ষ্যে ভেনেজুয়েলা উপকূলীয় অঞ্চলে সাউদার্ন স্পিয়ার নামে পেন্টাগনের অভিযান শুরুর ঘোষণায় তোলপাড় চলছে। এরজন্য এরইমধ্যে অঞ্চলটিতে অনেকগুলো মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ ও ১৫ হাজার সেনা জড়ো করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সামরিক মহড়ায় নামার ঘোষণা দিয়ে আগুনে ঘি ঢেলেছে ক্যারিবিয়ান দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো।

মাদুরো মাদকচক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছেন এমন অভিযোগ তুললেও তার প্রমাণ দিতে পারেনি ওয়াশিংটন। এরপরও ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের এসব সামরিক পদক্ষেপে উদ্বেগের মধ্যে সময় পার করছে দেশটির সরকার। চারটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপের ঝুঁকি এবং সুবিধা সম্পর্কে বিবেচনা করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তবে ভেনেজুয়েলায় ভেতরে সামরিক পদক্ষেপের বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে, শুক্রবার ট্রাম্পের এমন বার্তায় ওয়াশিংটন ও কারাকাসের মধ্যে উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। যেকোনো ধরনের সম্ভাব্য মার্কিন পদক্ষেপ মোকাবিলায় দেশের সেনা ও সাধারণ মানুষদের প্রস্তুত থাকার কথাও বলেছে ভেনেজুয়েলার সরকার। সেইসঙ্গে মার্কিন জনগণকে যুদ্ধবিরোধী বার্তাও দিয়েছেন মাদুরো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সামরিক মহড়া নিয়ে কড়া সমালোচনাও করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আবারও দায়িত্বজ্ঞানহীন মহড়া করছে। সুক্রে রাজ্যের উপকূলে তাদের জলসীমা সামরিক মহড়ার জন্য বরাদ্দ করেছে। যা ভেনেজুয়েলার মতো একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

ত্রিনিদাদ ও টোবাগো সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিলে আবারও দায়িত্বজ্ঞানহীন মহড়া করছে। সুক্রে রাজ্যের উপকূলে তাদের জলসীমা সামরিক মহড়ার জন্য বরাদ্দ করেছে। যা ভেনেজুয়েলার মতো একটি প্রজাতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রথম মেয়াদে, আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনেজুয়েলার বৈধ নেতা হিসেবে জুয়ান গুয়াইদোকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ২০১৯ সালের অভ্যুত্থানে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হননি গুয়াইদো। এখন যদি মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হন তাহলে বড় ধরনের জয় দাবি করতে পারবেন ট্রাম্প। যার পেছনে মাদক ও অভিবাসন প্রবাহ বন্ধ ছাড়াও ভেনিজুয়েলার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের তেল চুক্তির স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এখন বড় প্রশ্ন হলো- যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি মোকাবিলায় কতটা সক্ষমতা আছে মাদুরো প্রশাসনের। গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের ২০২৫ সালে করা সামরিক শক্তির তালিকা অনুযায়ী, সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে বিশ্বে ১৬০টি দেশের মধ্যে ভেনেজুয়েলার অবস্থান ৫০তম। আর লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার অবস্থান সপ্তম। দেশটি ব্রাজিল, মেক্সিকো এবং আর্জেন্টিনার মতো আঞ্চলিক শক্তির তুলনায় পিছিয়ে আছে এবং কলম্বিয়া, চিলি ও পেরুর সমপর্যায়ে রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে সামরিক সক্ষমতায় অনেক দুর্বল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এফএস