গাজা উপত্যকার যুদ্ধবিরতি মূলত কাগজে-কলমেই বহাল আছে। গেল ১০ অক্টোবর ট্রাম্পের উদ্যোগে শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস-ইসরাইল। তবে শুরু থেকেই তা লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলে আসছে দুই পক্ষ। তবে গেল মঙ্গলবার জিম্মির ভুল মরদেহ ফেরত এবং এক ইসরাইলি সেনাকে হত্যার অভিযোগ তুলে গাজায় ফের ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। এক রাতের মধ্যেই হত্যা করা হয় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর গাজায় এটি সবচেয়ে বড় হামলা। এর পরদিনই আবারও শান্তি প্রস্তাবে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। এর আগে গেল ১৯ অক্টোবর দুই ইসরাইলি সেনা নিহতের দায় হামাসের ঘাড়ে চাপিয়ে হত্যা করা হয় অন্তত ৩৬ জন ফিলিস্তিনিকে। তবে গাজার যুদ্ধবিরতি এখন ভঙ্গুর অবস্থায়।
এদিকে ইসরাইলের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও দাবি, গাজায় এখনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী একটি সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন গিয়ে বলেন, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধ পরিকর ইসরাইল।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের লক্ষ্য পূরণ নিশ্চিত করবে ইসরাইল। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজাকে বেসামরিকীকরণের যে লক্ষ্য নেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। চূড়ান্ত শান্তি প্রতিষ্ঠায় অন্যান্য পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে কাজ করছে ইসরাইল।’
যদিও গাজায় হামাসের নিরস্ত্রীকরণের বিরোধিতা করেছেন অধিকাংশ ফিলিস্তিনি। ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা এই উপত্যকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়েও সংশয়ে আছেন তারা। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন হামাস নিরস্ত্রীকরণ হলে ইসরাইল ফের হামলা শুরু করবে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আল-থানি। হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে কাতার চাপ দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:
মোহাম্মদ বিন আল-থানি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে সব পক্ষের সরাসরি কথা বলা উচিত। ইসলাইলি সেনাদের ওপর হামলা করে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে হামাস। যদিও হামাস এক বিবৃতিতে জানিছে, তাদের সামরিক শাখার কার্যক্রম এখন বন্ধ আছে। যুদ্ধবিরতি বহাল রাখাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
ইসরাইলি হামলাকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়। সংস্থাটির মতে, এমন অবস্থায় যুদ্ধবিরতি বহাল রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে প্রভাবশালী রাষ্ট্রসহ সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়। চুক্তি মেনে চলা নিশ্চিত করতে এবার এগিয়ে আসতে হবে। গেল দুই বছরে গাজা উপত্যকা অবর্ণনীয় দুর্দশার মধ্য দিয়ে গেছে।’
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় দীর্ঘ দুই বছর পর খুলেছে গাজার আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হলে গাজার ৫১টি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের দুই লাখের বেশি শিক্ষার্থীর জীবন পড়ে অনিশ্চয়তায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুকে নতুন জীবন শুরু বলছেন শিক্ষার্থীরা।
গাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘গেল দুই বছর যাবত আমাদের পড়াশোনা বন্ধ ছিল। ভাবতে পারিনি আমরা আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরতে পারবো।’
অন্য একজন বলেন, ‘দুই বছর পর ক্লাসে ফিরে নতুন আশার স্বপ্ন দেখছি। এটি শুধু পড়াশোনা নয়, নতুন জীবনের শুরু।’
এদিকে গতকাল (বুধবার, ৩০ অক্টোবর) রাতেও খান ইউনিস শহরে অন্তত ১০টি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এছাড়া, অধিকৃত পশ্চিম তীরে জলপাই সংগ্রহের সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ চালায় ইসরাইলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীরা।





