ঢাকা মেট্রো ল-১৮-১১৪৬। পেছনে থাকা একটি প্রাইভেট কারের ড্যাশক্যাম ফুটেজে ধরা পড়ে আতঙ্কের মুহূর্ত। বাইকে থাকা দুজন কালো শার্ট পরা ব্যক্তি কিছু একটা ছুড়ে মারছেন গাড়ির শোরুমের দিকে।
মুহূর্তেই বিস্ফোরণ! শোরুমের কাঁচের দেয়াল ভেঙে ধসে পড়ে কোটি কোটি টাকার দামি গাড়ির ওপর। ধোঁয়া আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর কুড়িল থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত গাড়ির শোরুমগুলোকে টার্গেট করা হচ্ছে। এসময়ে অন্তত ১২টি বিক্রয়কেন্দ্রে ককটেল হামলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই টার্গেট করা হচ্ছে। শুধু হামলাই নয়, হুমকি আসছে মেরে ফেলারও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী আমাদের জানান, তার শোরুমে এর আগেও দুইবার হামলা চালিয়েছে চাঁদাবাজ চক্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখনো আমাদের কাছে ফোন আসে। আগে ১০ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিলো, এখন বলছে এতে হবে না। এখন জীবন নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, শোরুমে আরও বড় পরিসরে ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হচ্ছে। অনেক আগে থেকে ব্যবসা করছি এখানে কিন্তু সরাসরি এভাবে চাঁদার হুমকি কখনো পাইনি।’
আর হামলার পর শুরু হয় ভয় দেখানো বার্তা, বিদেশি নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আসে মেসেজ, দাবি করা হয় টাকা। আশপাশের শোরুমগুলোতেও ফোন দিয়ে হুমকি দেয়া হয়। চাঁদা না দিলে পরের টার্গেট হবে তারা।
যুবলীগ নেতা তান কাশেম ভূঁইয়া ফোনে এক ব্যবসায়ীকে বলেন, ‘আপনারা ঝামেলা শেষ করবেন নাকি আমি ঝামেলা চালিয়ে যাব? আমি শেষবার যখন বলেছি ১০ লাখ টাকা পেমেন্ট পাঠিয়ে দাও, এটা দিয়ে দিলেই আর ঝামেলা হতো না।’
অনুসন্ধানে ওঠে এসেছে অভিযোগকারীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করা ব্যক্তির নাম তান কাশেম ভূঁইয়া। এক সময়ের যুবলীগ নেতা, যিনি আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছিলেন বিভিন্ন মিছিল ও সমাবেশের সামনের সারিতে। কিন্তু এখন তার অবস্থান দুবাইয়ে। সেখান থেকেই এই চাঁদাবাজি চক্র পরিচালনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
ফোনে যোগাযোগ করলে পাওয়া যায় অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা তান কাশেম ভূঁইয়াকে। তবে চাঁদাবাজির সঙ্গে তিনি জড়িত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে পাণ্টা হুমকি দেয়া হয় প্রতিবেদককে।
ক্ষমতা হারানোর পরও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের কিছু প্রভাবশালী সদস্য এই চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটে যুক্ত আছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনিক শিথিলতা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা এখনও সক্রিয়।
দেশে রি-কন্ডিশন গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা সভাপতি আবদুল হক জানান, এত বড় পরিসরে চাঁদাবাজির ঘটনা এর আগে ঘটেনি। মামলা করার সাহসও পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা, এ মাসের মধ্যেই ব্যবস্থা না নিলে আগামী মাস থেকে গাড়ি কেনাবেচা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বারভিডার প্রেসিডেন্ট আবদুল হক বলেন, ‘যুবলীগ করতো এক সময়। এখন সে পরিচয়ও দেয়। পুলিশের কাছে দেয়। হুমকি দেয় আগামী দিনে ক্ষমতায় আসলে দেখে নেবে। পুলিশকেও হুমকি দেয়, এরকম আমরা শুনেছি। যে লোক এটা করছে তার হয়তো এখানে কোনো কানেকশন থাকতে পারে। আমাদের এখানে অনেক কালো টাকাও এসব ব্যবসায় এসেছে। খুব অবাক হবো না, যদি আমাদের এখানে এমন কেউ থাকে, যার সঙ্গে তার সংযোগ আছে। তারা হয়তো তাকে সহযোগিতা করছে।’
ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) জানান, মামলা করা হলে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। প্রাথমিক জিডির ভিত্তিতে তদন্ত চলছে, তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
ভাটারা থানার পুলিশ পরিদর্শক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এখনো তদন্তাধীন আছে। আমরা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছি এ ঘটনায় কারা জড়িত আছে। বিদেশি যে নাম্বার থেকে কল দিয়ে চাঁদা দাবি করছে, যদিও এখনো চাঁদা দেয়নি। কিন্তু চাঁদা দাবির এ অভিযোগের বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
বর্তমানে দেশে নতুন ও রি-কন্ডিশন ব্যক্তিগত গাড়ির বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে।




