উদ্বাস্তু হয়েও গাজার ধ্বংসস্তূপে ছুটে চলেছেন দমকলকর্মী রায়েদ

রায়েদ আশুর
রায়েদ আশুর | ছবি: সংগৃহীত
0

গাজায় দুই বছর ধরে চলা সংঘর্ষে ধ্বংস হয়েছে শহরের পর শহর, গৃহহীন হয়েছেন লাখো মানুষ। এমন এক পরিস্থিতিতে, যেখানে জীবন বাঁচানোই বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন একজন অভিজ্ঞ দমকলকর্মী রায়েদ আশুর। নিজে উদ্বাস্তু হয়েও প্রতিদিন ছুটে চলেছেন ধ্বংসস্তূপের ভেতর, জীবনের খোঁজে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা। যেখানে প্রতিটি বাড়িই যুদ্ধের চিহ্ন বহন করে চলেছে, সেখানে এক ব্যক্তি এখনও আগুন নেভান, জীবন বাঁচান, আর খালি হাতে খুঁজে ফেরেন বেঁচে থাকা মানুষদের।

রায়েদ আশুর। তিন দশক ধরে গাজা দায়িত্ব পালন করছেন ফায়ার ফাইটার হিসেবে। গেল দুই বছর ধরে গাজার সিভিল ডিফেন্স কোনো জরুরি সরঞ্জাম পায়নি। কাজ করে যাচ্ছেন সরঞ্জাম ছাড়াই—পুরানো ফায়ার ট্রাক, ধ্বংস হয়ে যাওয়া যন্ত্রপাতি নিয়ে খালি হাতেই চলছে অভিযান।

গাজা ফায়ার ফাইটার রায়েদ আশুর বলেন, ‘আমরা বারবার সরঞ্জামের জন্য আবেদন করেছি, বিশেষ করে মেডিকেল সাপ্লাইয়ের জন্য। কিন্তু এখনও কিছুই পাইনি। আমরা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে চলেছি, মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। প্রতিটি জীবন আমাদের কাছে মূল্যবান।’

২০২৩ সালের নভেম্বরে একটি উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সময় আশুরের নিজের ভাই মুসার বাড়ি বোমা হামলায় ধ্বংস হয়। ভাইকে হারানোর সেই মুহূর্ত আজও ভুলতে পারেননি তিনি।

আরও পড়ুন:

রায়েদ আশুর বলেন, ‘আমি বুঝতেই পারিনি—যে ধ্বংসাবশেষ দেখছি, সেটা আমার ভাইয়ের বাড়ি। বিস্ফোরণে ১৮ মিটার গভীর গর্ত হয়েছিল। মিসাইলটি ওকে সরাসরি আঘাত করেছিল। এক মুহূর্তেই সে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, আর খুঁজে পেলাম না। এ ঘটনায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ি আমি।’

দুই বছরের নিরবচ্ছিন্ন হামলায় আশুর ও তাঁর পরিবার খাবার, পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের সংকটে রয়েছেন। এতকিছুর পরও প্রতিদিন ছুটে যান উদ্ধারকাজে যোগ দিতে।

রায়েদ আশুর বলেন, ‘প্রতিদিন মিশনে যাওয়ার আগে স্ত্রী আর সন্তানদের বিদায় জানাই। জানি না আর ফিরতে পারবো কি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, জীবনে একটা উদ্দেশ্য থাকে—আর সেটা হল মানুষের পাশে থাকা।’

উদ্ধারকাজের বিপদ ছাড়াও, আশুরের মতো গাজার বহু মানুষ, একটু আশ্রয়, একটু খাবার আর বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন। তবে কোনোকিছুই আশুরকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরাতে পারেনি।

এসএস