বাশার আল আসাদের শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর উল্লাস যেনো থামছেই না সিরিয়াবাসীর। আসাদ পরিবারের সব চিহ্ন সিরিয়া থেকে মুছে ফেলতে চাইছে তারা। এবার দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আসাদের বাবা হাফিজ আল আসাদের ভাস্কর্য টেনে নামানো হলো। কয়েক দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে থাকা ভাস্কর্যটি নামিয়ে এর ওপর দাঁড়িয়ে উল্লাস করে সাধারণ মানুষ।
আসাদ সরকারের পতনের এক সপ্তাহ পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার নির্দেশ দেয় দেশটির ক্ষমতায় থাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী। রাজধানী দামেস্কসহ বিভিন্ন শহরে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তবে ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় শঙ্কায় আছেন অভিভাবকরা।
একজন শিক্ষক বলেন, 'শিক্ষার্থীদের নিরাপদে আসা-যাওয়ার জন্য স্কুল থেকে যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আশা করছি ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়বে।'
একজন অভিভাবক বলেন, 'শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। তারা দেশকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।'
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'স্কুল খুলে দেয়ায় আমি খুব খুশি। এতদিন রাস্তায় হাঁটতেও আমার ভয় লাগতো।'
এদিকে দীর্ঘ ১২ বছর পর সিরিয়ায় আবারও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেছে তুরস্কের দূতাবাস। রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত দূতাবাসে এক যুগ পর উত্তোলন করা হলো তুর্কি পতাকা। সিরীয় শরণার্থীরাও দেশে ফিরতে শুরু করেছে। গেল এক সপ্তাহে তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় ফিরেছে প্রায় আট হাজার বাসিন্দা।
ইসলামি শাসনে সংখ্যালঘু বা অন্য ধর্মের মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দামেস্কের গির্জায় জড়ো হয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের আশা নতুন শাসক সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ধর্মকে সম্মান জানাবে।'
গৃহযুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কবলে ধ্বংস হয়ে যায় দেশটির অর্থনীতি। সিরিয়ার পুনর্গঠনে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা দ্রুত শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন সিরিয়ার জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেইর পেডারসেন।
তিনি বলেন, 'সিরিয়ার ওপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। দেশটির পুনর্গঠনে এটি দ্রুত করতে হবে। একটি বিশ্বাসযোগ্য বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কোনো প্রতিশোধ দেখতে চাই না।'
সিরিয়ার ভূখণ্ডে দু'টি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি আছে আসাদ সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়ার। আসাদের পতনে কিছুটা চাপে পড়ে মস্কো। তাদের সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সরিয়ে নেয়ার চেষ্টায় আছে তারা। লাতাকিয়া প্রদেশের বিমানঘাঁটি থেকে রুশ বিমান ও সামরিক যান চলাচল করতে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিচ্ছে রাশিয়া।
ক্ষমতা গ্রহণের পর সিরিয়ার জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিদ্রোহী বাহিনী। তারা এই মুহূর্তে নতুন করে সংঘাতে জড়াতে চায় না। এদিকে আসাদ সরকারের পতনের পর লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইল অধিকৃত গোলান মালভূমির বাফার জোনেও আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলিরা।