শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এক ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে একেকটি ফ্যাকাল্টি কিংবা ছাত্রাবাস। নয়নাভিরাম এ ক্যাম্পাস শাটল ট্রেনের হুইসেলে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে। দিনভর ২৬ হাজার টগবগে তাজা প্রাণের পদচারণায় মুখর থাকে। কিন্তু তারপরও কোথাও কোথাও এই আশা জাগানিয়া ক্যাম্পাসের আলো কেড়ে নিতে চায় অন্ধকার।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে কানাচে মাদকের কালো থাবা। মাদকের থাবায় নষ্ট হয়েছে অনেক মেধাবীর সুন্দর ভবিষ্যৎ কিংবা মা বাবার স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই এমন অর্ধশতাধিক স্থান চিহ্নিত করেছে যেখানে মাদক সেবন হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, কর্মকর্তা কর্মচারী এমনকি বহিরাগতরাও মাদক গ্রহণ করে। হলগুলোতে নানা সময় অভিযানে উদ্ধার হয় মাদক। এসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম যেমন ক্ষুণ্ন করেছে তেমনি শিক্ষার পরিবেশও করেছে নষ্ট।
এমন বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চালু করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের ব্যবস্থা। যা দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম। মূলত ইউরিন বা প্রস্রাব পরীক্ষা করেই ফলাফল জানা হবে। পাঁচ ধরনের মাদক শনাক্ত করা যাবে এ পরীক্ষায়।
চবি মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবু তৈয়্যব বলেন, 'এটা হলো এমপিটামিং ও পিআর, অ্যালকোহল, ক্যানাবিস আর বেঞ্জোডায়াজেপিন গুলথেরিয়া নিয়ে আমরা এখানে পাঁচটি প্যারামিটে টেস্ট করবো। যেটা সরকারকর্তৃক অনুমোদিত।'
এই টেস্টের জন্য চায়না কীটের বাইরে উন্নতমানের কীট আনা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। ডোপ টেস্টে শিক্ষার্থীদের জন্য ফি নির্ধারণ হয়েছে ৩৫০ টাকা। ফলাফল প্রাপ্তির পর কোনো শিক্ষার্থীর শরীরে মাদক শনাক্ত হলে তাকে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে সরিয়ে আনা হবে। এক্ষেত্রে তার পরিচয়ও রাখা হবে গোপন।
ডোপ টেস্ট কমিটির সমন্বয়ক ড. আতিয়ার রহমান বলেন, 'আমরা অবশ্যই চাইবো এর মধ্য দিয়ে একটা অ্যাওয়ারনেস ডেভেলপ করবে। যাতে করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই প্রশাসনের মাধ্যম দিয়ে একটা খবর পায় যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কখনোই কোনোদিনই মাদক চলবে না।'
চবির ১২টি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের পর্যায়ক্রমে ডোপ টেস্টের আওতায় আনা হবে। আগামী দেড় থেকে দুই মাসের এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথম পর্যায়ে শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্ট করানো হবে। পরবর্তীতে এটি বাড়ানোরও পরিকল্পনা আছে প্রশাসনের।
ড. আতিয়ার রহমান বলেন, 'প্রাথমিক পর্যায়ে ছাত্রদের দিয়ে শুরু হচ্ছে। ধীরে ধীরে এটি ছাত্রী, আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি যদি আমরা বোধ করি যে আমাদের পারিপার্শ্বিকতা বলছে শিক্ষকদেরও কারও কারও টেস্ট করানোর প্রয়োজন হতে পারে সে বিষয়গুলো আমাদের বিবেচনা অবশ্যই থাকবে।'
শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অতীতের কালো অধ্যায় মুছে সুন্দর পরিবেশ নির্মাণের এমন উদ্যোগে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা বলছেন তারা। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে সবারই ডোপ টেস্ট করানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'শিক্ষা এবং মাদক দু'টির অবস্থান দুই মেরুতে। সুতরাং একজন শিক্ষার্থী কোনোভাবেই মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে না।'
অন্য একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'প্রশাসনের এই সঠিক সিদ্ধান্তকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানাই। শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস গড়তে এটা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।'
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮টি বিভাগ ও ছয়টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। প্রতি বছর এসব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয় প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী। নবীন যারা ভর্তি হবেন আবাসিক হলে বরাদ্দ পেতে তাদেরও ডোপ টেস্ট করানোর কথা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।