দীর্ঘ সংঘাত ও রক্তপাতের পর ধ্বংসস্তূপের নগরীতে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা সংঘাত আপাতত বন্ধ হওয়ায়, আনন্দে উৎফুল্ল সাধারণ জনগণ। বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালটা তাই বৈরুতবাসীর কাছে ছিল একটি আলাদা। এমন শান্ত বৈরুত শেষ কবে দেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা, তা যেন নিজেরাও মনে করতে পারছেন না।
২ মাসের প্রত্যক্ষ ও ১৩ মাসের পরোক্ষ যুদ্ধ শেষে এবার দেশ পুনর্গঠনের পালা। তাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন লেবাননের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি। নাজিব মিকাতি জানান, সময় এসেছে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের। পাশাপাশি ইসরাইলকে প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বানও জানানো হয়। দেশটির স্পিকারের কণ্ঠেও ছিল একই আহ্বান।
নাজিব মিকাতি বলেন, 'যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে সেনা প্রত্যাহার করুন। জাতিসংঘের সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করুন। আমাদের দেশের নাগরিকদের অধিকার রয়েছে তাদের ঘরে শান্তিতে বসবাস করার।'
চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত থেকে সেনা আর সমরাস্ত্র সরিয়ে নিতে ৬০ দিন সময় পাবে হিজবুল্লাহ ও ইসরাইল। এসময় লেবানিজ সেনাবাহিনীর অন্তত ১০ হাজার সেনা মোতায়েন থাকবে দক্ষিণ সীমান্তে। লিতানি নদীর উত্তরে চলে যেতে হবে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে পরাজিত করেছে ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর এমন দাবির প্রতি সমর্থন নেই খোদ ইসরাইলের জনগণের। চ্যানেল ১৩ এর জরিপ বলছে, ৬১ শতাংশ ইসরাইলি মনে করেন, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে হিজবুল্লাহকে পরাজিত করার দাবিটি মিথ্যা। যদিও ৪৪ শতাংশ ইসরাইলি চুক্তিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এর আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, হিজবুল্লাহকে দুর্বল করে কয়েক দশক পেছনে নিয়ে গেছে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা পাল্টে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি আরও বলেন, যুদ্ধবিরতির সময়টা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজে লাগাবেন তিনি।
এদিকে ইসরাইলের হুমকি হিসেবে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করেছেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট জানান, ইসরাইলকে নিরাপত্তা দিতে ও পশ্চিমা শত্রু দমনে মধ্যপ্রাচ্যে বাড়ানো হবে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি। লেবাননের পর গাজায় যুদ্ধবিরতিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ইরান, তুরস্ক, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পাশাপাশি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে হুথি, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ও হামাসসহ বিভিন্ন প্রতিরোধ গোষ্ঠী।