বৃষ্টি থেমে গেলেও কমছে না দুর্ভোগ। তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচলও।
এমন দৃশ্য ভারতের আসাম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের। গেল শুক্রবার (৩০ মে) ও পরদিন শনিবার টানা বৃষ্টি হয়েছে আসামের বিভিন্ন জেলায়। বন্যা পরিস্থিতিতে রাজ্যের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলায় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত আসামের বেশ কিছু অঞ্চলে বজ্রসহ ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
বর্ষার আগে আসায় নিম্নচাপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল। যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে আসাম ও মেঘালয়ের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা ১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে। গেল দুই দিন ভারি বর্ষণের পর সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, অরুণাচল, মেঘালয় ও মিজোরামে আকস্মিক বন্যার পাশাপাশি মারাত্মক ভূমিধসের খবর পাওয়া গেছে।
শুধু আসামের ১২টি জেলাতেই সহায়সম্বল হারিয়েছেন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। শনিবার অরুণাচল প্রদেশে ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে দুই পরিবারের সাত সদস্যের। মিজোরামে ভারি বৃষ্টির পর ধসে গেছে পাঁচটি আবাসিক ভবন ও একটি হোটেল।
টানা বৃষ্টিতে লাচেনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে গেছে উত্তর সিকিমের। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে আছেন প্রায় ৫০০ পর্যটক। সিকিম সরকারের পক্ষ থেকে তাদের হোটেল এবং বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেল থেকে উত্তর সিকিমের অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায়। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) পর্যটকবাহী গাড়ি খাদে পড়ে যে আট জন নিখোঁজ হয়েছিলেন, এখনও তাদের সন্ধান মেলেনি।
এ ছাড়া, দক্ষিণ ভারতের কেরালায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকশ’ বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে। আট জেলায় জারি আছে বন্যা সতর্কতা। সাম্প্রতিক দুর্যোগে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকে নিহতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার। অন্ধ্র প্রদেশে বন্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয়দের পুনর্বাসন নিয়ে কাজ শুরু করেছে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। এছাড়া রাজ্যের নিচু অঞ্চলের মিউনিসিপ্যাল কর্মীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে দুই দিনের অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের ঐতিহাসিক ডাল লেক। ছাতা মাথায় দিয়ে, বর্ষাতি পড়ে নৌকা চালাচ্ছেন স্থানীয়রা।
অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি ক্রমশ দুর্বল হয়ে উত্তর ও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া পরিস্থিতি আগের চেয়ে স্বাভাবিক হয়েছে। তবে অতিবৃষ্টিতে বাঁধ ভেঙ্গে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজ্যের উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা।