আধিপত্য আর জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘাতে বিভক্ত ভারতের মনিপুর। রাজ্যজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় ইম্ফাল উপত্যকায় মেইতেই এবং সংলগ্ন পার্বত্য এলাকাগুলোতে কুকি আদিবাসীদের কড়া পাহারায় আলাদা করে রাখতে তৎপর নিরাপত্তা বাহিনী।
ইন্টারনেট শাটডাউন-কারফিউ, নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই রাজপথে নামছে বিক্ষুব্ধরা। শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত পাঁচ হাজার সদস্যের ৫০টি ব্যাটালিয়নকে মনিপুরে পাঠাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, যাদের মধ্যে দু'হাজার সেনা পৌঁছে যাবে আজই (মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর)। নাশকতার চেষ্টা হতে দেখা মাত্র দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়া হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীকে।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রচণ্ড অস্থিরতার আঁচ পৌঁছেছে ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও। মহারাষ্ট্র-ঝাড়খান্ডের নির্বাচনী সভা বাতিল করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও দফায় দফায় বৈঠক করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যদিও অভিযোগ উঠছে, মনিপুরে সহিংসতা চলতে দেয়ার পেছনে মেইতেই বা কুকিরা নয়, কলকাঠি নাড়ছে তৃতীয় পক্ষ।
ভারতের প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, 'সংঘাতের দেড় বছর হয়ে গেছে। ভারতেরই রাজ্য মনিপুর। অথচ আজ পর্যন্ত মনিপুরে যাননি প্রধানমন্ত্রী। মনিপুরে আমি গিয়েছি। নিজের চোখে দেখেছি যে সেখানে কী হচ্ছে। আমরা সরকারকে বলেছি যতদ্রুত সম্ভব সহিংসতা বন্ধ করুন। কিন্তু হয়নি। তার মানে এতে কারো না কারও স্বার্থ তো আছে। যেকোনো কারণেই হোক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছেন না।
ভারতের মনিপুর উইমেন গান সারভাইভার্স নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক বীণালক্ষ্মী নেপরাম বলেন, 'হাজারও মানুষকে হত্যার পর তিনদিনে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল গুজরাট দাঙ্গা। মুজাফফরনগর দাঙ্গা ২০ দিনে এবং উত্তরপূর্ব দিল্লির দাঙ্গা সাতদিনে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। তাহলে মনিপুরে সংঘাত কীভাবে ১৮ মাস ধরে চলছে? তার মানে নিশ্চয়ই এর পেছনে কারও স্বার্থ আছে। এরা যারাই হোক না কেন, মাদক পাচারকারী কিংবা রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী, যারাই এই ভূরাজনৈতিক সহিংসতার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে, তাদের অবিলম্বে এসব বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।'
মনিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেইদের বাস রাজ্যের ১০ শতাংশ জমিতে। অন্যদিকে কুকি আর নাগা সম্প্রদায় মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হলেও তাদের দখলে ৯০ শতাংশ জমি। পুষে রাখা ক্ষোভ জাতিগত সংঘাতে রূপ নেয় ২০২৩ সালের মে মাসে। পাহাড়ে জমির অধিকার এবং সরকারি চাকরিতে সুবিধার জন্য কুকি এবং নাগাদের মতো সমান স্বীকৃতি চায় মেইতেইরা। মনিপুরের উচ্চ আদালত মেইতেইদের দাবি মেনে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলায় ক্ষিপ্ত কুকিরা নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে মেইতেই অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে।
ইম্ফাল রিভিউ অব আর্টস অ্যান্ড পলিটিক্সের সম্পাদক প্রদীপ ফানজৌবাম বলেন, 'সহিংসতার অনুপস্থিতি মানে শান্তি নয়। যারা দায়িত্বে আছেন, তারা এই পরিস্থিতিকে শান্তি হিসেবে দেখিয়ে আসছেন। এটা খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ। বহুদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে এখন। সময়ের সাথে এটা হওয়ারই ছিল।'
৩৩ লাখ বাসিন্দার মনিপুরে গেলো এক সপ্তাহে দাঙ্গায় প্রাণ গেছে ২০ জনের বেশি মেইতেই ও কুকি আদিবাসীর। গেলো দেড় বছরে এ সংখ্যা কমপক্ষে আড়াইশ', বাস্তুচ্যুত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ।