প্রায় ৩ বছর ধরে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দিতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, তখন ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে বারুদের গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রুশ ভূখণ্ডে হামলা চালাতে ইউক্রেনকে অনুমতি দিয়েছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট তিন সূত্রের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে মার্কিনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
এতদিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার অনুরোধ জানালেও, মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ায় হামলা চালাতে দেননি বাইডেন। এবার অনুমতি পেয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রাশিয়ায় দূরপাল্লার হামলা চালাতে ইউক্রেন কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানা গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য জানাতে রাজি হয়নি। তবে খবরটি সামনে আসতেই গণমাধ্যমের ওপর কিছুটা ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে।
তিনি বলেন, ‘আজ আমাদের নিজ নিজ কর্মকাণ্ডের জন্য অনুমতি নেয়ার বিষয়ে মিডিয়াতে অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগে থেকে ঘোষণা দিয়েও যুদ্ধ হয় না।’
গোপন সূত্রের তথ্য আরও বলছে, প্রথম হামলাতেই এ.টি.এ.সি.এম.এস রকেট ব্যবহার করতে পারে ইউক্রন। যেটি ৩০৬ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন কিনা তাও স্পষ্ট নয়। কারণ রিপাবলিকান পার্টির কিছু কংগ্রেস সদস্য ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া অস্ত্র ব্যবহারের নীতিমালা সহজ করার জন্য বাইডেনকে অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্রসহ যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া।
পুতিন বলেন, ‘পশ্চিমারা মনে করে রাশিয়া কখনই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না। এখন তাদের সতর্ক করতে চাই যে, যদি কেউ আমাদের সার্বভৌমত্বকে হুমকিতে ফেলতে চায়, তাহলে আমরাও বসে থাকবো না। পারমাণবিক অস্ত্রসহ সব উপায় ব্যবহার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
এ অবস্থায় যুদ্ধ উত্তেজনা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ উত্তেজনা বাড়তে দেয়া যাবে না। এটি বন্ধে আমাদের অবস্থান খুবই স্পষ্ট। আমরা শান্তি চাই। আমরা চাই সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব, জাতিসংঘের সনদ এবং আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ন্যায়বিচারের সঙ্গে শান্তি হোক।’
এদিকে মার্কিন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য উত্তর কোরিয়ার হাজার হাজার ভাড়াটে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েই মূলত যুদ্ধ উত্তেজনাকে উসকে দিয়েছে রাশিয়া। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়া টার্গেট করতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইয়ান কেলি বলেন, ‘আমি মনে করি পুতিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করবে, তবে তা সরাসরি হবে না। এ ক্ষেত্রে সামরিক হামলার কোনো শঙ্কা নেই। তবে সাইবার আক্রমণের মতো পরোক্ষ হামলা হতে পারে।’
এমন উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে রোববার রাতে ৩ মাসের মধ্যে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় আক্রমণ চালিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি, মাইকোলাইভ, ওডেসা এবং ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে ১২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ৯০টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে রুশ বাহিনী। এতে বেশ কয়েকজন হতাহতের শিকার হয়েছেন। এমনকি বিদ্যুৎ সরবরাহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।