গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বাইরের দৃশ্য এটি। স্ট্রেচার না পেয়ে নিজেরাই ধরাধরি করে একের পর এক আহত স্বজনকে হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। রোগীর আর্তনাদ আর স্থানীয়দের উৎকণ্ঠায় থমথমে গোটা হাসপাতাল চত্বর।
বুধবারও (১৩ নভেম্বর) উত্তর গাজার জাবালিয়া, মধ্যাঞ্চলীয় নুসেইরাত আর দক্ষিণের খান ইউনিসের আল মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরের অস্থায়ী তাঁবু লক্ষ্য করে দফায় দফায় হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান বহু ফিলিস্তিনি।
নেতানিয়াহু বাহিনীর অনুমোদন থাকার পরেও বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় অতর্কিত এই হামলা আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে দাবি করছে ফিলিস্তিনি প্রশাসন।
রাতভর হামলার পাশাপাশি চলে ধরপাকড়ও। অবরুদ্ধ গাজা, অধিকৃত পশ্চিমতীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে আটককৃত ফিলিস্তিনির সংখ্যা সাড়ে ১১ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে প্যালেস্টিনিয়ান প্রিজনারস সোসাইটি। শুধু তাই নয়, গেল বুধবার পশ্চিমতীর থেকে এক তরুণকে ইসরাইলি সেনারা তুলে নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করা হয়।
যুদ্ধের দামামা বাজছে লেবাননেও। গেল রাতে রাজধানী বৈরুতে অন্তত সাতটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা ও বেশ কয়েকজন সেনা আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। যদিও এসব হামলার বিপরীতে ইসরাইলে তিনটি সফল হামলার দাবি করেছে ইরান। আর, সিরিয়ার আকাশে দু'টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি তেল আবিরের।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু ও দ্বিরাষ্ট্র নীতি নিয়ে ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনায় বসতে চান ফিলিস্তিনে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ'র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। গেল মাসে সংস্থাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইসরাইলি পার্লামেন্ট। এতে করে ফিলিস্তিনি শিশুদের একটি গোটা প্রজন্ম শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে এমন আশঙ্কাও করা হয়।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত শুরুর পর ইসরাইলি হামলায় নিহত মানবাধিকার কর্মীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
ইউএনআরডব্লিউএ'র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, 'আমরা ট্রাম্পের সাথে আলোচনায় বসতে চাই। প্রতিটি নতুন পরিস্থিতি নতুন একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এই মুহূর্তে দ্বি-রাষ্ট্রনীতি আলোচনাকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে একটি সমাধান চায়।'
ট্রাম্পের মধ্যস্ততায় ফিলিস্তিনকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণার যে সম্ভাবনা দেখছে জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা। তা নিয়ে বিতর্কও আছে। বিশেষ করে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ইসরাইল নীতি উল্টো আভাস দিচ্ছে এমনটাও মনে করেন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞরা।