আমদানি-রপ্তানি
অর্থনীতি
0

পণ্য পরিবহনে কেন আকর্ষণীয় রুট হতে পারছে না চট্টগ্রাম-পানগাঁও নৌপথ?

কোনোভাবেই পণ্য পরিবহনে আকর্ষণীয় রুট হয়ে উঠতে পারছে না চট্টগ্রাম-পানগাঁও নৌপথ। উল্টো নানা জটিলতায় ১ বছরের ব্যবধানে এই নৌপথে পরিবহন কমেছে প্রায় ৯২ শতাংশ। আর পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনাল থেকে বন্দরের আয় কমেছে চারগুণ। সংকট নিরসন করে এই নৌ টার্মিনালের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ভাড়া উন্মুক্ত করাসহ বিভিন্ন সেবার খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যবহারকারীরা বলছেন, পণ্যের সুরক্ষা ও নিয়মিত জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে খরচ ও সময় দুটোই অন্যতম নিয়ামক। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৭০ শতাংশ পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল যায় ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। এতে মহাসড়কের ওপর চাপ কমাতে নৌ-পথে বিকল্প রুট হিসাবে ২০১৩ সালে ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের অদূরে নির্মিত পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটি চালু করা হয়।

লক্ষ্য ছিল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নৌপথে কম খরচে, নিরাপদে ও দ্রুত পণ্য পরিবহন করা। অথচ পানগাঁওতে অতিরিক্ত খরচ ও নানা সমস্যার অভিযোগে ১১ বছরের মাথায় এই নৌ টার্মিনাল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা।

গেল বছরেও সর্বোচ্চ প্রায় ৩০ হাজার টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে পানগাঁও আইসিটি। সেখানে চলতি বছরের ১০ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং নেমে এসেছে মাত্র ২ হাজার ১৫০।

আর ২০২৩ সালে অক্টোবর পর্যন্ত এই টার্মিনালে জাহাজ ভিড়েছে ১৪২টি, আর এই বছরে গেলো ১০ মাসে ভিড়েছে মাত্র ১৬টি জাহাজ। গড়ে এই টার্মিনাল থেকে বছরে ১২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত হয়েছে মাত্র ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

কেন এক বছরে পানগাঁও থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ব্যবসায়ীরা? গেল বছরে জুলাইয়ে এক দুর্ঘটনায় পানগাঁও এক্সপ্রেস নামে একটি জাহাজডুবির পর জাহাজ ও কনটেইনার ভর্তি পণ্য উদ্ধারে কতৃর্পক্ষের জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় আস্থা হারান শিপিং এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরা। ।

শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইটফরওয়ার্ডারদের অভিযোগ এই রুটে যেসব জাহাজ চলে, অধিকাংশের ইন্স্যুরেন্স নেই। ফলে কোনও দুর্ঘটনা হলে মেলে না ক্ষতিপূরণ। নিয়মিত জাহাজ না থাকায় দীর্ঘদিন পরে থাকে কনটেইনার। এছাড়া রেলপথের চেয়ে পানগাঁওতে পণ্য পরিবহনের জাহাজ ভাড়া বেশি।

বিশেষ করে ২০২২ সালে ভাড়া নিনির্ধারণ করে দেয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে শুল্কসংক্রান্ত জটিলতায় পণ্য খালাসে সময়ক্ষেপনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবহারকারীরা।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ‘ঢাকা আইসিটি থেকে এখানকার কস্ট কম হতে হবে তাহলে হয়তো এই রুটে পণ্য পরিবহণ হবে।’

এদিকে ফ্রেইটফরওয়ার্ডারদের পানগাঁও আইসিটিতে কাজ করতে পৃথক লাইসেন্স নিতে হয়। আর রপ্তানিমুখী পণ্য না পাওয়ায় গুটিকয়েক জাহাজ কোম্পানি ছাড়া বাকিরা তাদের নেটওয়ার্কে পানগাঁও আইসিটিকে গন্তব্যস্থল হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করছে না। এ কারণে, আগে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও রুটে চলাচল করতো সেটি কমে ২টিতে নেমেছে।

বাংলাদেশ ফ্রেইটফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি অমিয় শংকর বর্মন বলেন, ‘বাই রোডে যেখানে ১ থেকে ২ দিনে আমরা পণ্য নিয়ে আসতে পারি সেখানে পানগাঁওয়ে থেকে আসতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় লেগে যায়। আবার সেখানে থেকে সিঙ্গাপুর বা কলম্বোতে মাদার ভেসেল পণ্য নিতে পারবে কিনা সেটার সন্দেহ থেকে যায়।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য এবং তুলা, পেপার রোল, ফেব্রিকসহ সময় বাধা নয় এমন শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে পানগাঁও একটি হাব হতে পারে। এজন্য আন্তর্জাতিক ভেন্ডরদের ওপেন এলসি করার সুযোগ দেয়ার পাশাপাশি বন্দর ব্যবহারের চার্জ কমানো দাবি তাদের।

এ প্রেক্ষাপটে রুটটিকে পুনরায় সচল করতে ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে কয়েক দফায় বৈঠক করে চট্টগ্রাম বন্দর ও নৌ পরিবহণ মন্ত্রণালয়। তারই ফলস্বরূপ ভাড়া উন্মুক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন চার্জ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয়েছে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা। প্রয়োজনে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে কাস্টমস পলিসি সংশোধন করা হবে বলেও জানান চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জাহাজের ভাড়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে মিটিং হয়েছে সেটার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত চলে আসবে। আমরা চাচ্ছি যে সব ধরনের কার্গো যেন এখানে আনা নেয়া করা যায়।’

বছরে প্রায় এক লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে সক্ষমতার মাত্র ৮ ভাগ ব্যবহার হচ্ছে এই টার্মিনালের।

ইএ