যুদ্ধ , মধ্যপ্রাচ্য
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলের বিপক্ষে আরেক মিত্র দেশ ফ্রান্স

লড়াই চালানোর হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

লেবাননে ছয় দিনের স্থল অভিযানে ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করছে ইসরাইল। এমনকি হিজবুল্লাহর তৈরি ২৫০ মিটারের একটি গোপন টানেল ধ্বংসেরও দাবি তাদের। একইসঙ্গে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কঠোর জবাব দিতে প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছে দেশটি। এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা কমাতে গাজায় ব্যবহৃত অস্ত্র ইসরাইলের কাছে আর বিক্রি না করার আহ্বান জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। তবে মিত্রপক্ষের কারো সমর্থন না পেলেও লড়াই চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু।

সময় যতই গড়াচ্ছে লেবাননে ততোই প্রাণঘাতী হামলার ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে ইসরাইল। বোমা বিস্ফোরণে ধ্বংস হচ্ছে সবকিছু। দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী বৈরুত, কোনও এলাকায়ই এখন নিরাপদ নয়। প্রতিদিনই ঘটছে প্রাণহানি, জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।

এত বর্বরতার পরও দমে যায়নি ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলকে লক্ষ্যবস্তু করে চালানো হচ্ছে পাল্টা হামলা। রোববারের (৬ অক্টোবর) একটি হামলায় উত্তর ইসরাইলের শহর কারমেল ও দেইর আল-আসাদ এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ ইসরাইলিদের মনেও। তাই এসব এলাকা থেকেই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

স্থানীয় একজন বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরপর আমরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনছি। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের পাশের ভবনে মিসাইল আঘাত হেনেছে। ১০ মিনিট পর আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে ক্ষয়ক্ষতি দেখতে এসেছি। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ, আমরা ঠিক আছি।’

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই লেবাননে হিজবুল্লাহর ২৫০ মিটারের একটি গোপন টানেল খুঁজে পাওয়ার দাবি করছে স্থল অভিযানে থাকা ইসরাইলি বাহিনী। পরে হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধ সরঞ্জাম পাওয়ার পর টানেলটি ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। এমনকি ছয়দিনের স্থল অভিযানে ৪৪০ জন হিজবুল্লাহ যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলেও দাবি করছে ইসরাইলি বাহিনী। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও বেশি জোরালো করতে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক নির্দেশনাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলেও জানান ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে হিজবুল্লাহর আক্রমণের জবাব দেয়া হবে। অবস্থান এবং সময় বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো এবং লড়াই করবো।’

এদিকে সম্প্রতি ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কঠোর জবাব দিতেও প্রস্তুতি নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এতে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর ঠিক এক বছরের মাথায় মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ উত্তেজনা চরম পর্যায় পৌঁছেছে। এই উত্তেজনার পারদ কমাতে এবার ইসরাইলের বিপক্ষে কথা বললো মিত্র দেশ ফ্রান্স। লেবাননের প্রতি সংহতিও জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি অবিলম্বে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর অংশ হিসেবে গাজায় ব্যবহৃত অস্ত্র ইসরাইলের কাছে বিক্রি বন্ধের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘নেতানিয়াহু লেবাননের মাটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছেন। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা বাড়ছে। তাই আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাই। এর জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপও নেয়া দরকার, তা হলো ইসরাইলকে যুদ্ধের অস্ত্র সরবরাহ না করা। আমি মনে করি যে, যারা তাদের অস্ত্র সরবরাহ করে তারা একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতির ডাক দিতে পারেন না।’

ফ্রান্সের এমন আহ্বানে ক্ষিপ্ত ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। মিত্রপক্ষের কারো সমর্থন না পেলেও, যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত লড়াই কিছুতেই থামবে না বলে আরও একবার হুঁশিয়ারি দিলেন ইসরাইলের সরকারপ্রধান।

বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইসরাইল যেহেতু ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তাই সব সভ্য দেশকে ইসরাইলের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো উচিত। তবুও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা এখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছেন। এটি তাদের জন্যই অপমানজনক এবং লজ্জার। ইরান কি হিজবুল্লাহ, হুতি, হামাস এবং অন্যান্য প্রক্সিদের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে? অবশ্যই না। তাই আমি বলতে চাই ইসরাইল কারও সমর্থন না পেলেও জিতবে। নিশ্চিন্ত থাকুন, ইসরাইল যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করবে।’

এদিকে লেবাননে নতুন যুদ্ধ তরঙ্গ শুরু করলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসনের ভয়াবহতা থামায় নি ইসরাইল। মধ্য গাজার একটি মসজিদে বোমা হামলায় ২০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এক বছরে প্রাণহানি ৪১ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। আহত প্রায় ৯৭ হাজার।

এসএস