ভরা মৌসুম এলেই সমতলের চা শিল্পে নেমে আসে সংকট। অভিযোগ আছে, কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে কমিয়ে দেন চা পাতার দাম। এবারও চা চাষিদের কাছ থেকে মিলছে একই অভিযোগ। প্রতি কেজি চা পাতা সর্বনিম্ন ১৭ টাকায় কেনার কথা থাকলেও কারখানা মালিকরা দিচ্ছেন যে যার মতো দর। তার ওপর ওজন থেকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাদ দিয়ে ধরা হয় দাম। সাথে আছে টাকা পরিশোধ নিয়ে হয়রানিও। এতে ক্রমাগত লোকসানে দেয়ালে পিঠ ঠেকার জোগাড় চাষিদের।
একজন চা চাষি বলেন, 'আমরা চা চাষিরা কষ্ট করে চা উৎপাদন করি। কিন্তু আমরা ন্যায্যমূল্য পাই না। আমি উদ্যোক্তা, চাকরি না করার জন্য আমি চা পাতা চাষ করলাম। চা পাতা চাষ করে দেখলাম, আমাকে এখন চাকরির পেছনে দৌঁড়ানো লাগছে।'
চা পাতার ন্যায্যমূল্যের দাবিতে তাই সরব হয়ে উঠেছেন বাগান মালিকরা, নেমেছেন রাজপথে। বিক্ষোভ, মানববন্ধন, সমাবেশ ও স্মারকলিপি দেয়াসহ পালন করছেন বিভিন্ন কর্মসূচি।
চা চাষিদের মধ্যে একজন বলেন, 'পাতা নিয়ে বাজারে যাওয়ার পর বলে আমাদের অকশন বাজার খুব খারাপ। প্রথম অজুহাতই এটা দেখায়। তারা বাধ্য করছে নীলকরদের মতো চা তাদের কাছে বিক্রি করতে।'
চা আইন সংশোধন করে সমতলের জন্য আলাদা নীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ বাগান মালিকরা। চায়ের সর্বনিম্ন দর প্রতি কেজি ৪০ টাকা নির্ধারণ, সমতলের চা শিল্পকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এনে ভর্তুকির ব্যবস্থা করাসহ আট দফা দাবি তাদের।
আন্দোলনকারীদের একজন নেতা বলেন, 'কৃষকরা তাদের ভিটা-বাড়ির জমি পর্যন্ত আজকে চা পাতা করেছে। কিন্তু এমন এটা অবস্থায় নিয়ে এসেছে। এখন তারা বিভিন্নরকম সিন্ডিকেট করছে।'
একজন চা চাষি বলেন, 'আমরা ক্ষুদ্র চা চাষিরা দীর্ঘদিন থেকে নির্যাতিত হয়েছি। এই নির্যাতন থেকে বের হতে চাই।'
তবে অভিযোগ অস্বীকার করছেন কারখানা মালিকরা। কোনো কারখানা ওজন থেকে বাদ দিয়ে দাম ঠিক করলে, সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এই কর্মকর্তা।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া গ্রিন কেয়ার চা কারখানার ম্যানেজার মঞ্জুর আলম বলেন, 'আসলে যদি কোনো চা কারখানা যদি ১৭ টাকার নিচে চা পাতা কিনে থাকে এটা তাদের নিজস্ব দায়বদ্ধতা। এবং এটা সম্পূর্ণই তার ব্যক্তিগত বিষয়। আর যদি কেই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশও বাদ দিয়ে থাকে, এটা সম্পূর্ণ অমানবিক।'
কারখানা মালিক ও চাষিদের কথা চিন্তা করে নিলাম বাজারে চায়ের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দেয়া হলেও, বাস্তবে তা ঘটছে না। এমন অবস্থায় চা শিল্প বাঁচাতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সংকট সমাধানের কথা বলছেন চা বোর্ডের কর্মকর্তা।
পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের চা বোর্ডের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, 'আমাদের উত্তরাঞ্চলের যারা চায়ের সাথে সম্পৃক্ত স্টক হোল্ডার আছেন, তাদের সবার একটা সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রশাসনসহ সবাইকে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে।'
গত দুই দশকে পঞ্চগড়ে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। ছোট বড় চা বাগান গড়ে উঠেছে প্রায় ৮ হাজার।