কোনোভাবেই এগোতে পারছে না বাংলাদেশের চা শিল্প

সংকটে চা শিল্প, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিতে বাড়ছে বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা | Ekhon Tv
0

কোনোভাবেই চা শিল্পে আর এগোতে পারছে না বাংলাদেশ। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ চা বাগানের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে পুরো শিল্প এ মুহূর্তে সংকটময় এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এ সংকট থেকে বের হয়ে চা শিল্পের ভিত মজবুত করতে রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ড।

দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ সুরমা উপত্যকায় চা শিল্প একটি প্রতিষ্ঠিত খাত হলেও এখন তার জৌলুস হারাচ্ছে দিন দিন। উৎপাদন কমে যাওয়া, খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ মাঝে মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষে এখন বিপর্যস্ত এই শিল্পটি। দশ বছর সময়ের ব্যবধানে চা শিল্পের গড় উৎপাদন ২২ শতাংশ বাড়লেও লোকসানের বৃত্ত থেকে কোনভাবেই বের হতে পারছে না বাগানগুলো । ফলে আশঙ্কাজনক হারে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বাগান ।

আফজাল রশিদ চৌধুরী, পারিবারিক ভাবেই চায়ের সাথে বেড়ে ওঠা তার। সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বর্তমানে চায়ের হালচাল নিয়ে আলাপকালে বলছিলেন, অতীত হয়েছে সুদিন, নানামুখী সংকটে বিপর্যস্ত চা বাগানগুলো ।

সিলেট নিনা আফজাল ইন্ড্রাস্টিজ লি.-এর প্রধান পরিচালক আফজাল রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি কেজিতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা করে সবাই লস দিচ্ছে। চায়ের বিক্রয়মূল্য যদি বাড়ানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে চা শিল্পের জন্য এটা মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

সাম্প্রতিক সময়ে চা শিল্পের প্রকৃত অবস্থা শোচনীয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া আর ভঙ্গুর বাজার ব্যবস্থার কারণেই এই শিল্প এখন অনেকটা হুমকির মুখে । মত দিলেন চায়ের দাম বৃদ্ধিসহ পণ্যটিকে রপ্তানি মুখী করার।

মৌলভীবাজার মমিনছড়া ও মাথিউরা টি এস্টেটের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দীন খান বলেন, ‘প্রতি বছর অনেক চা অবিক্রীত থাকে। তাই পরের বছর এই চাগুলোই বাজারে আসে এবং পুরাতন চা বাজারে আসার কারণে এর চাহিদা কমে যাচ্ছে।’

শ্রীমঙ্গল ব্রুকার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি সৈয়দ এস এম ইসলাম মুনীর বলেন, ‘চা শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমদানিকারক দেশগুলোকে আমাদের সরকার থেকেই বাছাই করে দিতে হবে এবং সেখানে আমাদের বিশেষায়িত একটা দলের তত্ত্বাবধানে রপ্তানি করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

কয়েক বছরের ক্রমাগত আর্থিক ক্ষতির কারণে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব আর গুণগত মান বৃদ্ধি না পাওয়াই এই অঞ্চলের চা শিল্প বিকাশের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে মন্তব্য চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের । তবে আশ্বাস দিলেন চা শিল্পের অতীত ফিরিয়ে আনার জন্য গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের।

বাংলাদেশ টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘চা শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে হবে। আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে, তাই আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে সেচ এবং অন্যান্য সু্যোগ সুবিধাগুলোর ব্যবস্থা করে চা শিল্পকে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবমুক্ত করতে হবে।’

ঐতিহ্যগতভাবেই সিলেট একটি চা উৎপাদনকারী অঞ্চল, যেখান থেকেই বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চাষের শুরু। চা বোর্ডের তথ্যমতে দেশের উৎপাদিত চায়ের ৮২ শতাংশই সিলেট অঞ্চল থেকে উৎপাদিত হয়।

এসএইচ