গাজার মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি শরণার্থী শিবির আর অধিকৃত পশ্চিমতীরে পুরোদমে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। বিমান আর ড্রোন দিয়ে সমানে হামলা চালানো হচ্ছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ওপর। মধ্য গাজায় তাঁবু টানিয়ে আশ্রয় নেয়া গৃগহীণ বাসিন্দাদের ওপর হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। যতই দিন যাচ্ছে ততই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। বাড়ছে শিশু হতাহতের সংখ্যাও। পশ্চিমতীরে খাদ্য ও পানি প্রবেশ করতে না দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
এমন অবস্থায় বহুমুখী আন্তর্জাতিক চাপে থাকলেও নিজের অবস্থান থেকে যেন নড়ছেনই না ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। এতদিন গাজার দক্ষিণ সীমান্ত করিডোরে সীমিত পরিসরে সেনা মোতায়েন রাখার কথা বলে আসলেও এখন তিনি বলছেন, মিশর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডোর ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি জানান, শুধু তখনই গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, যখন হামাস এই করিডোর সংঘাতের জন্য ব্যবহার বন্ধ করবে।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এই করিডোর সবসময় নজরে রাখতে হবে। আমরা লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি, হামাস নির্মূল, বন্দিদের মুক্ত করা আর গাজা যেন ইসরাইলের জন্য হুমকি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। ইসরাইল ফিলাডেলফি করিডোর নিয়ন্ত্রণ করবে। হামাসকে আবারও সুযোগ দেবো না।'
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের যে টানেল থেকে ইসরাইলি ছয় বন্দির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তার ভিডিও প্রকাশ করেছে আইডিএফ। এরপর থেকে আরও ক্ষোভে ফুঁসছে তেল আবিব। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতেও যুদ্ধবিরতি কার্যকর করে শতাধিক ইসরাইলি বন্দিকে মুক্ত করার দাবিও জানান তারা।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ দফায় দফায় আলোচনায় বসলেও আসছে না কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত। বুধবারও জরুরি আলোচনায় বসে নিরাপত্তা পরিষদ। এতে, গাজার পাশাপাশি পশ্চিমতীরে হামলার ভয়াবহতা বাড়লেও ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত অভিযোগ করেন, ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামাসের সিরিজ রকেট হামলার ঘটনার পর এখন পর্যন্ত হামাসের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়নি। যদিও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি জানান, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরাইল, অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না জাতিসংঘ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, খুব দ্রুতই যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, 'মার্কিনসহ সব বন্দিদের মুক্ত করে আনতে কাজ করছি। হামাসের নির্মমতার নিন্দা জানাচ্ছি। ছয় বন্দিকে হত্যার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। হামাসকে চুক্তিতে আসতে চাপ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কূটনীতির বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারি না। এই কাজটি সময়সাপেক্ষ। এর আগে কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্য দিয়েই বন্দিদের মুক্ত করা গেছে।'
জাতিসংঘে ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, '৭ অক্টোবর থেকে কতো প্রস্তাব পাশ হলো, হামাসের নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে কিছুই হলো না। নিরাপত্তা পরিষদকে বলবো, হামাসকে নিয়ে প্রস্তাব পাশ করান। এখানে আলোচনার অবকাশ নেই । হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো জাতিসংঘের দায়িত্ব। বন্দিদের মুক্ত করে আনতেও হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করা জরুরি।'
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেন, 'ইসরাইল তো ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছে। এই উপত্যকায় স্থায়ীভাবে সেনাবাহিনী নিয়োগের চেষ্টা চলছে। এই ভূখণ্ডকে গায়েব করে দিতে চায় ইসরাইল। স্বার্থ উদ্ধারে এখানে তারা গণহত্যা চালাচ্ছে। কোনো ফিলিস্তিনিকে জীবিত থাকতে দিবে না ইসরাইল।'
চরম সংঘাত সহিংসতার মধ্যে পোলিও টিকাদান কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হয়েছে উপত্যকায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এই ধাপে প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেয়া হয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর সাময়িক যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে আবারও শুরু হবে পোলিও টিকাদান কর্মসূচি। সর্বমোট ৬ লাখ ৪০ হাজার শিশুকে পোলিও টিকা দেয়া হবে গাজা উপত্যকায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, প্রায় এক বছর ধরে চলা এই সেনা অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশ ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণরুপে ধ্বংস হয়ে গেছে।