গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মিশরে চলমান আলোচনার মধ্যেই ইসরাইল ও ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর পাল্টাপাল্টি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। এতে, আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এমন উত্তাপের মধ্যেই এবার পাল্টাপাল্টি হুমকি দিয়েছে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ। গোষ্ঠীটির ওপর চালানো হামলা এখানেই শেষ নয় বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতি কঠোর সতর্কবার্তাও দেন তিনি।
বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, 'আমরা হিজবুল্লাহকে অবিশ্বাস্যভাবে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছি। তিন সপ্তাহ আগে আমরা শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকারকে নির্মূল করেছি। রোববারও আমরা হিজবুল্লাহর আক্রমণাত্মক পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়েছি। বৈরুতে নাসরাল্লাহ এবং তেহরানে খামেনির জানা উচিত, এই পরিস্থিতি আরেকটি পদক্ষেপের পথ খুলে দিয়েছে। হিজবুল্লাহর ওপর হামলার গল্প এখানেই শেষ নয়।'
এরমধ্যেই, রোববার ইসরাইলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ এবং সামরিক গোয়েন্দাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানোর দাবি করছে হিজবুল্লাহ। ফুয়াদ শুকারকে হত্যার প্রতিশোধে এ হামলা চালানো হলেও ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানায় ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি। তবে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সন্তোষজনক না হলে ভবিষ্যতে আবারও যেকোনো সময় ইসরাইলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে হামলা চালানো হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরল্লাহ বলেন, 'রোববারের হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যদি ফলাফল সন্তোষজনক হয় তাহলে বৈরুতে ফুয়াদ শুকারকে হত্যার প্রতিশোধ এখানেই সমাপ্ত হবে। আর তা না হলে অন্য যেকোনো সময় আবারও পাল্টা জবাব দেয়া হবে।'
এমন উত্তেজনার মধ্যে হিজবুল্লাহ নেতার ভাষণে মনোবল আরও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান লেবাননের সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় একজন বলেন, 'নাসরাল্লাহর ভাষণ সবসময় মনোবল বাড়ায়। প্রতিরোধের সমর্থকদের এবং সব দেশপ্রেমিক মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। তার কথাগুলো সান্তনাদায়ক ও বাস্তবসম্মতও বটে।'
রোববারের ঘটনায় গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে নানা মহলে। এমনকি ওই হামলার মধ্য দিয়ে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহ সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে কী না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনা কমাতে যুক্তরাষ্ট্র তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, 'আমরা ৭ অক্টোবর থেকে চলমান সংঘাত আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা এ বিষয়ে অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের সাথেও কথা বলছি। সেখানে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির বিষয়সহ ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অবশ্যই, আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান' একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ।'
মূলত হামাস নির্মূলের নামে ৭ আগস্ট গাজায় শুরু হওয়া ইসরাইলি আগ্রাসন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান উত্তেজনার সূত্রপাত। এরপর লড়াইয়ের ময়দানে টিকে থাকতে বৈরুতে গেল জুলাইয়ের শেষে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডার ফুয়াদ শুকার এবং তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ইসরাইল। যার জেরে ইরান ও তাদের মিত্র গোষ্ঠীরা প্রতিশোধে নেশায় জ্বলতে থাকায় আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।