টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের কাইতলা গ্রামের ঘটু মিয়া। কাঁধে কটু ও পিঠে ঝুড়ি বেঁধে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি গাছে গাছে। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে কোনো ফলের খোঁজে বেরিয়েছেন এই শ্রমিক। তবে না, পিঁপড়ার ডিমের খোঁজে এই আয়োজন।
প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ডিম সংগ্রহের উপর নির্ভর করে তার জীবিকা। আর এ থেকে মাসে তার আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।
ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিক ঘটু মিয়া বলেন, ‘২০ থেকে ২২ বছর ধরে ডিম ভাঙ্গা ধরেছি। মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা ইনকাম আছে আবার খরচও রয়েছে।’
শুধু ঘটু মিয়া নয়, তার মতো মির্জাপুর, সখীপুর, ঘাটাইল ও মধুপুরের শতাধিক শ্রমিক পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এসব শ্রমিকরা প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামের ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার ঘুরে গজারি, মেহেগনি, আমসহ বিভিন্ন গাছ থেকে পিঁপাড়ার ডিম সংগ্রহ করেন। চৈত্র বৈশাখ মাসে একজন শ্রমিক প্রতিদিন এক থেকে দেড় কেজি ডিম সংগ্রহ করলেও বর্তমানে ৫০০ গ্রাম থেকে ৮০০ গ্রাম ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। প্রতি কেজি ডিম পাইকার ও ব্যবসায়ীদের কাছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করেন।
ডিম সংগ্রহকারী শ্রমিকদের একজন বলেন, ‘আগের মতো ডিম পাওয়া যায় না। অনেক দুর হেটে ঘুরে ডিম সংগ্রহ করতে হয়।’
পাইকার ও ব্যবসায়ীরা এসব ডিম সংগ্রহ করে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। তারা প্রতি কেজি ডিম ১৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। তবে সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতাদের পূরণ করতে পারেন না ব্যবসায়ীরা।
পাইকারদের একজন বলেন, ‘ আমি মাসে ৩ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার ডিম বিক্রি করি। আর এখন ডিম কম পাওয়া যায় কিন্তু চাহিদা বেশি।’
আর বিশেষজ্ঞদের দাবি, পিঁপড়া ছোট প্রাণি হলেও এর সাথে অন্য পাখির খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও পিঁপড়া গাছকে সুস্থ ও সতেজা থাকতে সহযোগিতা করে। অবাধে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করলে এর প্রভাব পরিবেশের উপর পরতে পারে।
টাঙ্গাইল মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইএসআরএম বিভাগের প্রফেসর ড. মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘পিঁপড়া ছোট প্রাণি হলেও পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অবাধে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে পিঁপড়াকে নিধন করা উচিত না।’
পিঁপড়ার ডিমে শ্রমিক থেকে পাইকার ও ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান হওয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের অর্থনীতিতে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।