দেশে এখন
0

ঢাকাকে বিভক্ত করা নড়াই নদী আজ মৃতপ্রায়

রাজধানী ঢাকাকে মাঝখান থেকে ভাগ করেছে যে নদী তার নাম নড়াই। তবে বর্জ্য মিশে এই নদীর জল আজ বিষাক্ত। দেখা মেলা না মাছের। হাতিরঝিলে স্লুইস গেট বসানোর কারণে নড়াই নদী দিয়ে কারওয়ান বাজারের সঙ্গে রূপগঞ্জের মানুষের যে ব্যবসা বাণিজ্য হতো সেটিও এখন বন্ধ। ফলে দিন দিন কমছে এই পথের অর্থনৈতিক অবদান।

ধোলাই আর জিরানী খালের সংঙ্গে নড়াই নদী এসে মিলিত হওয়ায় এর মোহনার নাম ত্রিমোহনী। যদিও কাগজে-কলমে নড়াই, নদী থাকলেও বাস্তবে তা রূপ নিয়েছে খালে। দখল-দূষণ আর বর্জ্যে আজ যেন সে মৃত্যুর অপেক্ষায়।

নড়াই নদীতে যে কত আবর্জনা আর ময়লা ফেলা হয় তার প্রমাণ এর পানি প্রবাহ। নদীর স্বচ্ছ সাদা জলের ধারার সঙ্গে মিলিয়ে যেতে চায় বনশ্রী, আফতাবনগরের মতো আবাসিক এলাকার কালিমাময় ময়লা জল।

বর্জ্য মিশে নড়াই নদীর জল আজ বিষাক্ত। দেখা মেলা না মাছের। একসময় নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দারা নড়াই নদী দিয়ে নৌকায় পণ্য এনে মেরাদিয়া হাট কিংবা কারওয়ান বাজারে বিক্রি করতো। বর্তমানে যে অংশটি হাতিরঝিল নামে পরিচিত, সেটি নড়াই নদীর অংশ হলেও স্লুইস গেট দিয়ে একে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। যার ফলে কারওয়ান বাজারের সঙ্গে রূপগঞ্জের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, এই খালে আমরা গোসল করতাম, মাছ ধরতাম। কিন্তু সবই এখন স্মৃতি। এক সময় নৌকা দিয়ে এপার-ওপার চলাচল করা যেত। তখন খালে অনেক পানি ছিল। এখন এই নদী আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। এখান থেকে শুধু বিষাক্ত হাওয়া আর মশা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।

এতো কিছুর পরেও নিরুত্তাপ সিটি করপোরেশন। যদিও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে কাজ করছে তারা। কোথাও কোথাও সেই সীমানা চিহ্ন খুঁজেও পাওয়া গেলো। যদিও বেশিরভাগ সীমানা চিহ্নেরই দেখা মেলে বাসাবাড়ির দেয়ালে। এতেই বোঝা যায় নড়াই নদীর প্রশস্ততা কেমন ছিলো। তবে কবে নড়াই তার পূর্বের রূপ ফিরে পাবে সেটির উত্তর জানা নেই কারও।

দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, 'আমাদের চারপাশে যে নদীগুলো রয়েছে সেগুলো কেউ দখল করার চেষ্টা করলে, আমরা অবশ্যই দখলমুক্ত করবো। নদী দখলের কোনো তথ্য পেলে কঠোর ব্যবস্থা নিব।'

উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, 'সূতিভোলা খাল থেকে বনশ্রী খাল পর্যন্ত সংযুক্তি করা হবে। আমি সবাইকে সংযুক্তির কথা বলেছি।'

২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে নদী ও খালের দায়িত্ব বুঝে নেয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। হাতে পাওয়ার পর থেকেই এসব জলাশয় নিয়ে মেয়ররা শুনিয়ে আসছেন নানা পরিকল্পনার কথা। তবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান নদী রক্ষায় আন্দোলনকারীরা।

পরিবেশকর্মী সুমন শামস বলেন, 'মানুষের মধ্যে যতটা সচেতনতা এসেছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ততটা আসেনি। ঢাকার দুই মেয়র যৌথ পদক্ষেপ নিলে দ্রুত কাজ শেষ হতে পারতো। কিন্তু এখানে সমন্বয়হীনতা রয়েছে।'

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, একসময় নড়াই নদীর দৈর্ঘ্য ছিল ৭ কিলোমিটার। যা এখন দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ উভয় দিকে কমেছে। পাশাপাশি এই নদীতে একসময় শ'খানেক নৌকা চলত। সেই সংখ্যাও এখন নেমেছে মোটে ১০টিতে।