প্রবাস
দেশে এখন

দক্ষ কর্মী তৈরিতে পুরনো যন্ত্র, কর্মহীন অনেক প্রবাসী

প্রশিক্ষণ ছাড়া বিদেশ গিয়ে কর্মহীন থাকা কিংবা কাঙ্ক্ষিত কাজের সন্ধান না পাওয়ার খবর নতুন নয়। পর্যাপ্ত দক্ষতার অভাবে প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীদের একটা বড় অংশ পড়েন নানা সংকটে। কিন্তু তাদের প্রশিক্ষিত করে তোলার প্রশিক্ষণ সেন্টারগুলোই অনেকটা পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে। প্রশিক্ষণার্থী টানতেও অনেকটা ব্যর্থ তারা।

প্রবাস জীবনে রয়েছে নানা চড়াই-উতরাই আর কাজের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ। তাই প্রবাস জীবন বেছে নেয়ার আগে নিজেকে ঝালিয়ে নিচ্ছেন সিরাজগঞ্জের সেলিম রেজা। কারণ ভিনদেশে কাজের বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে বিকল্প নেই প্রশিক্ষণের।

সেলিম রেজা বলেন, 'আস্তে আস্তে সময়ের সাথে আমরাও এগিয়ে যাবো। সেগুলোকে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় আনতে হবে। ভাষা শেখার পরীক্ষা দেয়ার পর এসব সার্টিফিকেট থাকলে, এবং তা দেখাতে পারলে ভিসাটা তাড়াতাড়ি হয়।'

বাংলাদেশ-কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে কেউ ওয়েল্ডিং, মেশিন টুলস প্রাকটিস, মটর ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং, কেউবা আবার সুইং মেশিন অপারেটরের কাজ করতে ব্যস্ত। ব্যবহারিক ক্লাসের বাইরে রয়েছে একাডেমিক প্রশিক্ষণ। আছে বিভিন্ন দেশের ভাষা শেখার কোর্সও। তবে বেশিরভাগ কোর্সই চলছে পুরনো যন্ত্রপাতি দিয়ে।

সময়ের পরিক্রমায় প্রযুক্তি বদলে গেলেও এসব ট্রেনিং সেন্টার মান্ধাতার আমলেই রয়ে গেছে। তবে প্রযুক্তি হালনাগাদের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানান অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান।

তিনি বলেন, 'উন্নত প্রযুক্তিগুলো সবক্ষেত্রে আমরা চালু করতে পারিনি। অল্পকিছু জায়গায় আমরা চালু করতে পেরেছি। তবে অন্য ক্ষেত্রেও আমরা খুব শিগগিরই করে ফেলবো।'

বিদেশগামী নারীদের অনেকেই হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে। এখানেই গোপালগঞ্জের পলি আক্তার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন হাউজ কিপিং-এর ওপর। মাত্র সাত দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে চার বছর আগে লেবানন গিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাই ফিরে এসে আবারও দুই মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণে মনোযোগী তিনি।

তার মতো অনেকেই সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ভাষা দক্ষতার পাশাপাশি গৃহস্থালি কাজের ওপর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যার জন্য এককালীন ৯ হাজার ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় তাদের।

প্রতিষ্ঠানটিতে দেখা যায়, প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা বেশি নয়। সরঞ্জামগুলোও অনেক পুরনো। নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারও কম।

একটি বেসরকারি সংস্থা'র তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার হার মাত্র ২ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন কারিগরি ও সেবামূলক কাজে দক্ষতা নিয়ে প্রবাসী হয় প্রায় ৩৫ শতাংশ কর্মী। বাকি ৬২ শতাংই অদক্ষ হিসেবেই পাড়ি জমান বিদেশে।

ব্র্যাকের হেড অব মাইগ্রেশন শরিফুল হাসান বলেন, 'শুধু টেকনিক্যালই না, জাতিগতভাবেই আমাদের কারিগরি দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার হার কম। ১০ থেকে ১৫ বছর পর সৌদি আরবে কেমন কর্মী প্রয়োজন, কাতারে কেমন কর্মী প্রয়োজন সে অনুযায়ী যদি আমাদের টেকনিক্যাল কলেজগুলোকে জানাতে পারতাম তাহলে আমাদের কর্মীরা সেভাবে কাজ করতে পারতো।'

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ট্রেনিং সেন্টারকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর আশ্বাস প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর।

উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে দেশ বা পরিবারের মায়া ত্যাগ করে অনেকেই বেছে নেন প্রবাস জীবন। তবে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণই পারে সে জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তুলতে। আর সে কারণেই কারিগরি ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে আমূল পরিবর্তনের তাগিদ অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের।

এমএসআরএস

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর