১৯৫৬ সালে মিশরের বিরুদ্ধে সমরশক্তি প্রয়োগে যুক্তরাজ্য আর ফ্রান্সের সঙ্গী হয়েছিল ইসরাইল। ১৯৬৭ সালে মিশর ও সিরিয়ার সঙ্গে ছয়দিনের যুদ্ধে একাই বিজয় নিশ্চিত করেছিল ইসরাইল। সেই ইসরাইলই স্থল, নৌ, আকাশপথে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে সর্বশক্তি দিয়েও চার মাসেও কাবু করতে পারেনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ৮০'র দশক থেকেই ইসরাইলে সামরিক কার্যকারিতা নিম্নমুখী।
আটলান্টিক কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি'র পরিচালক জোনাথন প্যানিকঅফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার একটি অংশ হলো সীমান্ত বাড়ানো। কতোদূর বাড়বে জানা না গেলেও ধারণা করছি গাজার আরও এক-দেড় মাইল ভেতরে বেড়া দেয়া হবে। আরও দেয়াল, আরও ক্যামেরা। এসব কিন্তু ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলার আগেও ছিল। কিন্তু তাও হামাসকে বা হামলা ঠেকানো যায়নি।
যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত গাজা ইসরাইলি আগ্রাসনে মানুষের বসবাসযোগ্যতা হারিয়েছে ঠিকই; ৩০ হাজারের বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে জাতিগত নিধন প্রচেষ্টাতে প্রায় সফলও বলা যায় ইসরাইলকে। কিন্তু পশ্চিমা মিত্রদের স্বার্থসিদ্ধির মতো কোনো অজর্ন দেখাতে পারেনি নেতানিয়াহু সরকার।
জোনাথন প্যানিকঅফবলেন, ৭ অক্টোবরের আগে ইসরাইলের নিজস্ব নিরাপত্তাই যতোটুকু ছিল, আজ কি তার থেকে পরিস্থিতি একটুও ভালো? আমার মনে হয় না। তবে গাজায় অবস্থানরত ইসরাইলি সেনারা যদি কাল উপত্যকা ছেড়ে চলে আসে? হয়তো আসবে না, কিন্তু যদি আসে, তাহলে ইসরাইলের পরিণতি আরও করুণ হবে। এই চ্যালেঞ্জ তো আগে জিততে হবে দেশটিকে।
ইহুদি দখলদারদের বিরুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য হামাস হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের ছায়াশক্তি ইসরাইল এবং বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্যের পতনের প্রতীক। ইসরাইল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপ ঠেকানোর চেষ্টা, নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে একের পর এক ভেটো দিয়েও নিন্দা কুড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসন কি নিজেদের পররাষ্ট্র নীতিতে শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন আনবে?
চ্যাথাম হাউজ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি প্রোগ্রামের অ্যাসোসিয়েট ফেলো নোমি বার-জ্যাকব বলেন, এটা ভীষণ স্পষ্ট যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে আরব অঞ্চলের কয়েকটি দেশের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিম তীর থেকে গাজা সংলগ্ন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করাও লক্ষ্য। নেতানিয়াহু অবশ্যই এ পরিকল্পনা সমর্থন করবেন না। কিন্তু নেতানিয়াহু আজীবন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীও থাকবেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ইসরাইলের নির্ভরশীলতা এবং রাজনৈতিক সুরক্ষার জন্য চাইলে এখনই নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে ইসরাইল সমর্থকদের খেপাতে চাইবেন না জো বাইডেনও।