সাতক্ষীরা শহরের কাছাকাছি বিনেরপোতা এলাকায় বেতনা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে মিঠাপানির মাছের শুঁটকি পল্লী।
কয়েক বছর আগে এই পল্লী গড়ে তোলেন মাছ ব্যবসায়ী প্রশান্ত বিশ্বাস। এক সময় তিনি সুন্দরবনের দুবলার চরে সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির কারবার করতেন। তবে লোকসানের মুখে বাড়ি ফিরে শুরু করেন মিঠাপানির মাছের শুঁটকি তৈরির কাজ। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাকে দেখে এখন অনেকেই শুঁটকি তৈরি করছেন।
প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, 'মিঠাপানির মাছের শুঁটকি খেতে খুব ভালো, অনেক চলে তাই এই মাছের শুঁটকি করি। প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ-এক লাখ টাকা করে আসে।'
সাতক্ষীরায় মিঠাপানির জলাশয়গুলোতে মাছ উৎপাদনের সাথে ধান চাষ করা হয়। এজন্য ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে মাছের ঘের শুকিয়ে কম দামে বিক্রি করা হয় মাছ। এরমধ্যে সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয়। মূলত এসব মাছ সংগ্রহ করেই তৈরি করা হয় শুঁটকি। যার বড় বাজার উত্তরবঙ্গ ও চট্টগ্রাম।
শুঁটকি শ্রমিকরা বলেন, 'তেলাপিয়া, বাইম, পুটি, শোল, টেংরা মাছ শুঁটকি করি। মাছটা লবণ দিয়ে দুইদিন হাউজে রাখি। পরে পরিষ্কার করে রোদে দেই। মিঠাপানির মাছের ব্যাপক চাহিদা। বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই।'
মিঠাপানির মাছ থেকে শুঁটকি উৎপাদনের কার্যক্রম জেলায় একেবারেই নতুন। এজন্য নতুন উদ্যোক্তা ও বাজার তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার কথা জানান মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান। বলেন, 'উৎপাদনের প্রক্রিয়ার জন্য একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কোন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে শুঁটকিকে প্রাধান্য দেয়ার ইচ্ছা আছে।'
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলার ৭টি উপজেলায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ৬৩ হাজার ২০০ ঘেরে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩০ হাজার টন। তবে মিঠাপানির শুঁটকির উৎপাদনের পরিমাণ নিয়ে তাদের কাছে কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুঁটকি ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে প্রতি মৌসুমে এখানে ৫০ থেকে ৫৫ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য ৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।