টাঙ্গাইলের কালিহাতীর জোকার চরের খামারি আসাদুল ইসলাম দুই বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেছেন মুরগির খামার। ডিম ও মুরগি বিক্রি করে চলে তার সংসার। তবে সময়ের সাথে বেড়েছে মুরগির খাবারসহ দ্রব্যমূল্যের দাম। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রি করতে গিয়ে এই খামারির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
খামারি জানান, প্রতিদিন আড়াই হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে তার। এর মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সংস্থার অভিযান। গেল দু'মাসে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে তার। এ অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে খামারে অভিযান না চালিয়ে ডিম উৎপাদনের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কমানোর দাবি তার।
খামারি আসাদুল ইসলাম তার খামারের মুরগির খাবার দিচ্ছেন। ছবি: এখন টিভি
প্রান্তিক খামারি আসাদুল ইসলাম বলেন, 'গত দুই বছরে যেভাবে খাবারের দাম বাড়ছে এটা অনেক বেশি। এক ব্যবস্থা খাবার তখন ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। এখন সেই খাবারের দাম হইছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা। একটা ডিমের উৎপাদন খরচ তো ১১ টাকার উপরে পরে।'
একই দাবি জানান জেলার বাকি খামারিরা। জানান, এক যুগে ডিম উৎপাদন খরচের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে বন্ধ হয়েছে জেলার ৮০ শতাংশ খামার। এতে কর্মসংস্থান হারানো শঙ্কায় কর্মচারীরা।
খামারের একজন কর্মচারী বলেন, 'আগে অল্প দামে ডিম বিক্রি করলেও খাবারের দাম কম থাকায় লাভ হতো। কিন্তু এখন ডিমের দাম বেশি হলেও লাভ হয় না। আমার মালিক বলছে এই ভাঙ্গা মাসের জন্য আমাদের চাকরি আছে এই ভাঙ্গা মাস থেকে আমাদের চাকরি থেকে চলে যেতে বলেছে।'
ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধেই জরিমানা করার কোনো বিকল্প নেই। আর খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহনশীল হওয়ার আহ্বান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার।
টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক্সফোর্সের আহ্বায়ক জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'যারা উৎপাদক শ্রেণি তাদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ বা কোনো কিছু নেই। সেজন্য কাউকে অর্থদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করে সরকারের প্রশাসনের কোনো উদ্দেশ্য নেই। শুধু ন্যায্যমূল্যটা নির্ধারণ করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সেটা করা হচ্ছে।'
টাঙ্গাইল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'প্রোডাকশন খরচ যত কমিয়ে আনতে পারবো তত কমে আমরা বাজারে ডিম সরবরাহ করতে পারবো। ভূট্টা সয়াবিন সবই আমদানি করতে হয়, এই আমদানি শুল্ককে অবশ্যই কমাতে হবে, দরকার হলে ফ্রি করতে হবে। এটা করলে অনেক দাম কমে যাবে।'
বাজারের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে জেলায় খামারের সংখ্যা কমায় প্রভাব পড়েছে ডিম উৎপাদনে। এক যুগ আগে প্রতিদিন তিন কোটি পিস ডিম উৎপাদন হলেও, তা নেমে এসেছে ৩৪ লাখ পিসে। এ অবস্থায় খামার টিকিয়ে রাখতে মুরগির খাবার দাম নিয়ন্ত্রণসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি খামারিদের।