সোনালী ফসলেই সারাবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব মিটে কৃষকদের। জাতীয় অর্থনীতিতেও বড় একটি জোগান আসে হাওরের একমাত্র বোরো ফসল থেকে।
সারাদেশে মানুষ যখন ঈদের আনন্দে ভাসছেন তখন যাদের শ্রম ঘামে হাওরের বিস্তৃত জমিতে ভরে ওঠে ফসল, সেই কৃষকদের এবারের ঈদ কেমন কাটবে?
হাওর পাড়ের কৃষক আব্দুল মান্নান। হাওরের ৩ একর জমিতে এবার বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন তিনি খরচ হয়েছে এক লাখ টাকা। এ ফসল তুলতে সময় লাগবে আরও কয়েকদিন। হাতে জমানো পুরো টাকাই খরচ হয়েছে মাঠে।
আব্দুল মান্নান বলেন, 'সন্তানরা কান্নাকাটি করছে ঈদের বাজার কেনাকাটা করার জন্য। কিন্তু আমাদের হাতে তো কোনো টাকা নেই।'
হাওরের এমন হাজারো কৃষকের আয়ের একমাত্র খাত বছরের একটি মাত্র ফসল। তবে এবার ঈদের আগে কোন ফসলই ঘরে উঠছে না। ফলে হাওরের এই জনপদে পুরনো পোশাকেই কাটবে ঈদ।
গত কয়েক বছর ঈদের আগে ফসল ঘরে উঠলেও আগাম বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। তাই স্বল্পমেয়াদী বেশ কয়েকটি জাতের ধান চাষ থেকে বের হয়ে আসছেন কৃষকরা।
চলতি বছর হাওড়ের ৪১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে পাকতে শুরু করেছে ফসল। তবে এ ফসল ঘরে উঠতে আরও সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ দিন। ঈদের আগে ঘরে ফসল তুলতে না পারায় অনেকটায় মলিন হাওর অঞ্চলের ঈদ আনন্দ।
হাতে টাকা না থাকার প্রভাব জেলার বিপণিবিতানগুলোতে। বাহারি নানা রকম পোশাকের দাম হাজার টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত । তবে স্বল্পমূল্যের পোশাকের দিকেই ক্রেতাদের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি।
বিক্রেতা একজন বলেন, 'আমাদের তো ধানের উপর সবকিছু নির্ভরশীল। ধান ঘরে উঠতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। ধান উঠলে বেচাকেনা ভালো হবে।'
ক্রেতা একজন বলেন, 'ফসল ঘরে না উঠায় মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। যার ফলে ঈদে কেনাকাটা কমে গিয়েছে।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর ফসল ঘরে না ওঠায় এবারের ঈদে বেশি বিক্রির সম্ভাবনা খুবই কম।
নেত্রকোনার গার্মেন্টস মালিক সমিতির ব্যবসায়ী নেতা মোঃ শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, 'আমাদের এখানে ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। ঈদ এমন সময়ে হচ্ছে যখন বোরো ধান এখনো কৃষক তুলতে পারেনি। আমরা আশা করছি রমজানের চাইতে কোরবানির ঈদে বেচাকেনা ভালো হবে।'
জেলা শহরের শতাধিক দোকানে অন্তত শত কোটি টাকার ব্যবসার আশা ব্যবসায়ীদের। তবে কৃষকদের আর্থিক সঙ্গতি থাকলে বেচাকেনার পরিমাণ আরও বাড়তো বলে দাবি তাদের।